তরুণীর আর্তচিৎকারেও মন গলেনি বর্বরদের, চরম নির্মমতা, চুড়ামনকাটিতে ইউপি সদস্যসহ আটক ৪

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ এক দল পুরুষে ভরে আছে দোকানটি। এর মধ্যে ৪/৫ জন মিলে পিটাচ্ছে এক যুবতীকে। কী এক আনন্দে (!) কেউ বলছে, ‘জুতো দিয়ে মার, কেউ বলছে চুল কেটে নেও’। আর যিনি মারছেন দৃঢ মুখে চুলের ঘেটি ধরে সপাটে মুখে বসাচ্ছেন জুতার পর জুতা। এরপর শুইয়ে দিয়ে পা উচু করে পায়ের পাতায় লাগলেন লাঠি দিয়ে মারতে- এমন এক বর্বরতার ভিডিও চিত্র ব্যাপক আলোচনার সাথে ছড়িয়ে পড়ার পর তৎপর হয় পুলিশ। আটক করে এক ইউপি সদস্যসহ চার জনকে। ঘটনা যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের। আটক ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। বাকি তিন জন হলেন আব্দুলপুরের আবু নাছেরের ছেলে ভুট্টো, আব্বাস আলীর ছেলে আজিম আলী ও জাহাঙ্গীরের ছেলে তেীহিদ হাসান।


যশোর কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, ১৫ মার্চ সন্ধ্যার দিকে এক যুবতী সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে একটি দরগাহ শরীফে অনুষ্ঠিত ওরস শরীফ থেকে এক যুবকের সাইকেলে তার বাড়ি আব্দুলপুরে আসে। এসময় আব্দুলপুরের কয়েক যুবক তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ তুলে ইউপি সদস্য আনিচুরকে খবর দেয় এবং তাদেরকে একটি দোকানে আটকে রাখে। ইউপি সদস্য আসার পর তিনি অভিযোগ শুনে ওই তাদেরকে মারপিট করেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে ইউপি সদস্যসহ চার জনকে আটক করেছে। আটক অন্য তিন জন হচ্ছে আব্দুলপুর গ্রামের ভুট্টো, আজিম ও তৌহিদ। যুবতীর পিতা এ ঘটনায় শনিবার কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন।

যুবতীর নানি জানিয়েছেন, তার নাতনি এনায়েতপুরের ওরস থেকে আসার সময় সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তার বন্ধুকে বলে সাইকেলে বাড়ি পৌঁছে দিতে। বাড়ির কাছে আসলে আল আমিন, আইয়ুব ও ভুট্টো তাদের আটক করে আজেবাজে কথা বলে মারধর করে। পরে ইউপি সদস্য আনিচের কাছে নিয়ে যায়। সেও তাদের বেদম মারপিট করে। এসময় পরিবারের সদস্যদেরকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নানি আরও জানান, ওই কিশোরী স্থানীয় আমবটতলার বেলতলা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দেয়নি। চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন জানান, ইউপি সদস্য আনিচুরসহ কয়েক জন তাদের মারপিট করেছে। এটা নৃশংস ও অন্যায়। আমি এর বিচার দাবি করছি। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর আনিচুর তার কাছে এসেছিলেন। তিনি ওই কিশোরী ও যুবক সম্পর্কে খারাপ অভিযোগ করেন। আমি তাকে বলেছি, ‘এ জন্য আইন আছে। তুমি কেন ব্যবস্থা নিবা।’ ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, একটি দোকানের ভিতরে কিশোরীকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। সে লুটিয়ে পড়লেও ইউপি সদস্যর পাশে থাকা কয়েক যুবক লাথিও দেন। কিশোরীর সাথে থাকা যুবককেও এলাপাতাড়ি মারধর করছে ইউপি সদস্য ও তার সাথে থাকা কয়েকজন যুবক। তারা বিভিন্ন লাঠি দিয়ে কিশোরীর হাতে ও পায়ে বেধড়ক মারপিট করে। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবতী জানান, তার সাথে থাকা যুবকের সাথে খারাপ সর্ম্পকের অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে জনসম্মুখে তাকে জুতা ও লাঠিপেটা করা হয়। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন। যুবতীর পিতা মামলার আসামিদের চরম শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, তার মেয়ের সাথে যা করা হয়েছে এটা চরম জঘন্য ও ঘৃণ্য কাজ। যুবতীর মা বলেন, আমার মেয়েকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে তার সমস্ত শরীরে কালো দাগ হয়ে গেছে। সে এখনো রাতে ভয়ে ঁেকপে উঠছে।