নাপা সিরাপ খেয়ে নয়, দুই শিশুকে হত্যা করে মা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নাপা সিরাপ খেয়ে নয়, পরকীয়া প্রেমের জেরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দুই শিশুকে মিষ্টির সাথে বিষ খাইয়ে হত্যা করেন মা লিমা বেগম। পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ তাকে শর্ত দিয়েছিলেন দুই সন্তানকে ছেড়ে এলেই কেবল লিমাকে বিয়ে করবেন তিনি। সেজন্য প্রেমিকের আনা বিষ মাখানো মিষ্টান্ন সন্তানদের খাইয়ে হত্যা করেন লিমা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো: আনিসুর রহমান। এর আগে দুপুরে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন লিমা। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপী তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একই দিন ভোর রাতে লিমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, চালকলে কাজ করার সুবাদে শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে লিমার অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লিমাকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করতেন সফিউল্লাহ। লিমার স্বামী ইসমাঈল হোসেন চোখে কম দেখেন এবং তার শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে। সেজন্য লিমা তাকে ছেড়ে সফিউল্লাহকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সফিউল্লার শর্ত ছিল দুই সন্তান ইয়াছিন (৭) ও মুরসালিনকে (৫) ছেড়ে আসতে হবে। তাই পথের বাধা সরাতেই প্রেমিকের সাথে মিলে দুই ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (১০ মার্চ) বাড়িতে এসে বিষ মাখানো মিষ্টি দিয়ে যান সফিউল্লাহ।

৫টি মিষ্টি দু’জনকে খাওয়ান লিমা। এরপরই দুই শিশু অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। পরে হত্যাকা- ধামাচাপা দিতে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। ঘটনার দিন লিমা ১৫ বার সফিউল্লাহর সাথে ফোনে কথা বলেছেন উল্লেখ করে আনিসুর রহমান জানান, ফোনকলের সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকা-ের পরিকল্পনার কথা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকা-ের বর্ণনা দেন লিমা। এ ঘটনায় দুই শিশুর বাবা ইসমাঈল হোসেন বুধবার সফিউল্লাহ ও লিমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। তবে সফিউল্লাহ এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোল্লা মো: শাহীন ও বিশেষ শাখার ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। নাপা সিরাপে মৃত্যুর ঘটনার খবর মিডিয়ায় প্রচার ও প্রকাশ পেলে সারা দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন কমিটি গঠন করে। একইসঙ্গে সিআইডির জব্দ করা সেই সিরাপের বোতলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গবেষণাগারে পাঠানো হয়।