করোনা পরীক্ষা : ভারতে যেতে দেড় হাজার, আসতে কত?

0

সুন্দর সাহা॥ ‘মরার পরে খাড়ার ঘায়ের মত’ এবার ভারত থেকে ফিরতেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের করোনা নেগেটিভ সনদ লাগবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এ নির্দেশনা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যে কোনো দিন কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে করোনা পরীা করতে ১৫০০ টাকা লাগে। এবার ভারত সরকার যে ফি নির্ধারণ করবে সেই টাকা দিয়েই ফিরতে হবে দেশে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে এ ধরনের একটি নির্দেশনাপত্র এসেছে বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে। তবে এ সিদ্ধান্ত স্থলপথের পাশাপাশি রেল ও আকাশ পথেও কার্যকর হচ্ছে।
এদিকে যে কোন সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষা করালে হবে না। সরকার নির্ধারিত হাসপাতালে করতে হবে। খুলনা বিভাগে এ জন্য খুলনা ও কুষ্টিয়ায় দুইটি সরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব লোককসমাজকে জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি হাতে পেয়েছি। ভারতে যাওয়া ও ভারত থেকে ফেরার সময় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশি-বিদেশি সব ধরনের যাত্রীদের করোনা পরীার নেগেটিভ সনদ সঙ্গে থাকতে হবে বলে বলা হয়েছে। বর্তমানে পূর্বের নিয়মে কার্যক্রম চলছে। পরবর্তী নির্দেশনা পৌঁছানো মাত্র করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ইমিগ্রেশন পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার সুজন সেন জানান, আগে বাংলাদেশিদের ভারতে যাওয়ার জন্য এবং ভারতীয়দের বাংলাদেশে আসার জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এবার বাংলাদেশিদের ভারত থেকে ফেরার সময় এবং ভারতীয়দের ভারতে ফেরার সময় করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে বলে নির্দেশনা এসেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের আসা ও যাওয়ার সময় করোনা পরীার সনদ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশিদের নেগেটিভ সনদ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশিরা যে পরিমাণ ভারতে যান তার মাত্র ৫ শতাংশ বিদেশি আসেন বাংলাদেশে। জরুরি ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশে করোনা পরীা করতে ১৫০০ টাকা লাগছে। তবে ভারতে বাংলাদেশিদের জন্য করোনা পরীার ফি কত পড়বে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। দুইবার করোনা পরীায় অর্থের পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়বে বাংলাদেশিদের। এতে বিশেষ করে বেকায়দায় পড়বেন চিকিৎসার জন্য ভারতে ভ্রমণকারী রোগীরা। এেেত্র রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করে পরীা কার্যক্রম সহজ ও কম খরচে করার আহ্বান জানান পাসপোর্ট যাত্রীরা। বাংলাদেশি একজন পাসপোর্টযাত্রী জানান, দেশে করোনা পরীা করতে ভোগান্তির শেষ নেই। সময় মত রিপোর্ট মিলছে না। অনেকে সময় মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় ভ্রমণ করতে পারছেন না। আবার ভারতে এ পরীা করাতে তাদের এমন ভোগান্তি আরও বাড়বে। দুর্ভোগ কমাতে সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি লোকসমাজকে জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের করোনা পরীার ফি সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ভারতসহ বিদেশ যেতে করোনা পরীার ফি দেড় হাজার টাকা মত। এই পরীা যশোরে হয় না। এমনকি সরকারি যে কোন ল্যাব থেকেও করালে হবে না। এই পরীা সরকার নির্ধারিত ল্যাবে করতে হবে। খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা ও কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে করোনা পরীার রিপোর্ট নিতে হয়।
জানা যায়, বেনাপোল থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বেশি যাতায়াত করেন। প্রতি বছর এ পথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ দেশি-বিদেশি যাত্রী যাতায়াত করেন। এদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ১০০ কোটির কাছাকাছি। এর আগে বাংলাদেশ ও ভারতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে দুই দেশের সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গত ১৩ মার্চ ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় যাতায়াত বন্ধ হয় বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশেও আটকে পড়েন ভারতীয়রা। গুরুতর রোগীরা চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে না পেরে বেকায়দায় পড়েন। যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরাও বড় ধরনের লোকসানে ছিলেন। পরবর্তীতে ৫ মাস পর প্রথমে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরার সুযোগ হয়। পরে বাংলাদেশিদের মেডিকেল আর বিজনেস ভিসায় যাতায়াতের সুযোগ দেয় ভারত সরকার।