অতি উৎসাহ বিপজ্জনকই হয়

0

উৎসাহী আর অতি উৎসাহী বলে দুটি শব্দ আছে, যার অর্থ সবারই জানা। সামান্য লেখালেখিতে যারা অভ্যস্ত তারা শব্দ দুটি প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করেন। উৎসাহ ব্যবহৃত হয় মূলত স্বাভাবিক মাত্রা আর অতি উৎসাহ ব্যবহার হয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা উপযাজক হয়ে নি®েপ্রাজনীয় কাজ করা বোঝাতে। অতি উৎসাহ কার্যত কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না বরং অনেক ক্ষেত্রে বিপদ বয়ে আনে। ভাগ্য জোরে বিপদ এড়ালেও বিব্রত হওয়া থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। যেমনটি হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার। গতকাল লোকসমাজে প্রকাশিত ‘পাঁচ থানা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে জাতীয় পতাকা সংবলিত চেয়ার’ শীর্ষক সংবাদে এমনই চিত্রই ফুটে উঠেছে।
খবরে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জেলার পাঁচটি থানার ওসির কক্ষে হঠাৎ একটি করে চেয়ার দেন। যার আকৃতি জাতীয় পতাকার অনুরূপ এবং চেয়ারে পিঠ রাখার স্থানে লাল সবুজ রংয়ে পতাকা আকানো। থানা কর্তাদের ভাষ্যানুযায়ী থানায় ওসির কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য এসপি স্যার এই চেয়ার দিয়েছেন। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পুলিশের সম্মান হিসেবে তিনি মনে করেন।
এদিকে, পুলিশ সুপারের এই কর্মে খোদ মুক্তিযোদ্ধারাই হতবা ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা বলেছেন, এটা জাতীয় পতাকা অবমাননারই সামিল। তারা এমন চেয়ারে বসতে রাজি নন। প্রচলিত এ প্রবাদ আছে যে ‘যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর’-এর মতো পুলিশ সুপারের প্রতি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার সচেতন মহলেও এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে অবস্থা প্রতিকূল দেখে পুলিশ সুপার চেয়ারগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন এবং তা পাঁচ থানা থেকেই সরিয়ে দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এ জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি তিনি মোবাইল রিসিভ না করাই। তিনি রিসিভ করলে জানা যেত এভাবে পতাকা অঙ্কিত চেয়ার তৈরি ও থানায় স্থাপনে সরকারি কোনো নির্দেশনা বা পুলিশ বিভাগীয় কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি-না। জানা যেত ঊর্ধ্বতনদের কারো সম্মতিতে করেছেন নাকি নিজের মন চেয়েছে তাই করেছেন ? যতদূর জানা গেছে, পতাকা অঙ্কিত চেয়ার নির্মাণ বা থানায় স্থাপনে সরকারি বা পুলিশ বিভাগের নির্দেশনা নেই। ফলে, ধরে নেয়া যায় কাজটি তিনি করেছেন ‘অতি ভক্তি; ও ‘অতি’ উৎসাহে। যা জাতীয় পতাকা নির্মাণ ও ব্যবহার বিধি ভঙ্গের সামিল হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকা কোনো ভাবেই অবমাননার কোনো সুযোগ কারো জন্য নেই। অবমাননার জন্য শাস্তির বিধান নির্ধারিত আছে। যা প্রয়োগ করার দায়িত্ব পুলিশের ওপরেই ন্যাস্ত। আমরা জানিনা এক্ষেত্রে আইনের কী হবে। তবে, খবর যখন হয়েছে, তখন কিছু একটা হবে বলে অনুমান করতে পারি।
আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশ সুপার পতাকা অবনমানার ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজটি করেননি। আমরা মনে করি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অতি শ্রদ্ধার প্রমাণ রাখতে অতি উৎসাহী হয়ে কাজটি করে ফেলেছেন। পরে বুঝতে পেরে ভুলটি সংশোধনের চেষ্টা করেছেন। কাজটির জন্য তিনি বিব্রতবোধ থেকেই সম্ভবত ফোন রিসিভ করেননি। এটা স্বাভাবিভকও বটে। তবে অস্বাভাবিক হচ্ছে আইন যার রক্ষার দায়িত্ব, অতি উৎসাহে তার আইন অবহেলা করা। আমরা আশা করবো, এই ঘটনা থেকে ক্ষেত্রবিশেষ অতি উৎসাহী সবাই সতর্ক হবেন এবং জাতীয় পতাকাসহ সকল বিষয়ে জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় আইন সচেতন থাকবেন।