যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনের পথে ইউরোপের ৩ প্রধানমন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পূর্ব ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন সদস্য দেশ পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীরা মঙ্গলবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে যাচ্ছেন। চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা ও পোল্যান্ডের মাতিউস মোরাভিয়েস্কি এই সফরের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইয়ানেস ইয়ানশা এবং তারা দুজন কিয়েভে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে দেখা করবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অফিস থেকেও এই সফরের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলা শুরুর পর এই প্রথম বিদেশী নেতাদের সেদেশে কোনো সফর হচ্ছে। তাছাড়া এই সফর এমন সময় হচ্ছে যখন কিয়েভের শহরতলীতে গত বেশ কয়েকদিন ধরে রুশ সৈন্যদের সাথে ইউক্রেনের সৈন্যদের লড়াই চলছে। সেই সাথে, প্রতিদিনই কিয়েভের ওপর রুশ গোলা এসে পড়ছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে। আতংকে গত কয়েক সপ্তাহে কিয়েভের প্রায় ৩৫ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকই পালিয়ে গেছে। তবে যুদ্ধ বন্ধে চলতি আপস-মীমাংসার অংশ হিসেবে এই সফর হচ্ছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে, এই যুদ্ধাবস্থার মধ্যে বিদেশী তিন নেতার যাত্রাপথে এবং কিয়েভে তাদের অবস্থানের সময় নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে – সেটাও পরিষ্কার করা হয়নি। রাশিয়ার কাছ থেকে তিন ইইউ নেতার এই সফর নিয়ে কিছু শোনা যায়নি। তবে চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইউক্রেনের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সমর্থন এই সফরের উদ্দেশ্য।’ তিনি বলেন, কিয়েভ সফরে ইউক্রেনের জন্য ইইউ’র পক্ষ থেকে একটি সহযোগিতা প্যাকেজের প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে দেয়া হবে।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টর্স জানিয়েছে, এই তিন ইউরোপীয় নেতা পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করেছেন এবং ট্রেনে চড়ে কিয়েভের দিকে রওয়ানা হয়েছেন। তিনি সপ্তাহ পর কিয়েভসহ ইউক্রেনের বড় ১০টি শহরের কোনোটিই এখনো রাশিয়ার সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। রুশ হামলার পর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন। রাজধানী ছেড়েও তিনি যাননি। এখন কিয়েভে বসে বিদেশী তিন নেতার সাথে বৈঠক করার ঘটনা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য একটি প্রতীকী সাফল্য হিসেবে দেখা হবে।
আত্মসমর্পণ করো- রুশ সৈন্যদের প্রতি জেলেনস্কি
কিয়েভের প্রান্তে বিশাল রুশ সেনা বহরের উপস্থিতি এবং শহরের ওপর অব্যাহত গোলাবর্ষণের মধ্যেও তার সর্বশেষ দেয়া বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট রুশ সৈন্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। রুশ সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘তোমার আমার কথা মন দিয়ে শোনো। রুশ অফিসারবৃন্দ, তোমরা এর মধ্যে বাস্তবতা বুঝে গেছে। তোমরা ইউক্রেন থেকে কোনো সাফল্যই নিয়ে যেতে পারবে না। সুতরাং তোমরা জীবন নিয়ে ফিরে যাও … তোমরা কেন জীবন দেবে? কিসের জন্য? আমি জানি তোমরা বাঁচতে চাও।’
মে মাসের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ?
ওদিকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেছেন, মে মাসের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হবে। অথবা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে। কারণ, তার মতে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো সৈন্য রাশিয়ার নেই। ‘আমি মনে করি মে মাসে, সম্ভবত মে মাসের প্রথম দিকেই একটি শান্তি চুক্তি হবে, অথবা তার আগেই,’ বলেন অলেক্সি অ্যারেস্টোভিচ। তিনি অবশ্য চলতি মীমাংসা আলোচনার সাথে যুক্ত নন। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দিনের পরের দিকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে রুশ ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল তাদের আলোচনা নতুন করে শুরু করবে বলে কথা রয়েছে।তবে গত কয়েক দফা বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। শুধু বিভিন্ন অবরুদ্ধ শহর থেকে বেসামরিক লোকজনের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ করিডোরের ব্যাপারে কিছু বোঝাপড়া হয়েছে।
খেরসন অঞ্চল এখন রাশিয়ার দখলে
যদিও কিয়েভের কাছে গত দু সপ্তাহ ধরে অবস্থান নেয়া রুশ সেনাবহর এখনো তেমন অগ্রসর হতে পারেনি, তবে ইউক্রেনের দক্ষিণে রাশিয়া বেশ সাফল্য পেয়েছে। কৃষ্ণসাগর এবং আজভ সাগরের কাছে ছোটো ও মাঝারি বেশকিছু শহর এখন রুশদের দখলে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসনের পুরো এলাকা এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তবে নিরপেক্ষ সূত্রে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলীয় শহর নিপরোর বিমানবন্দরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, এবং আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান বলেছেন দুটো ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানবন্দরের ‘ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে’।

সূত্র : বিবিসি