‘ইউএনও ওয়াহিদার প্যারালাইজড ডান সাইডের রেসপন্স জিরো’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে তার প্যারালাইজড হওয়া ডান সাইডের রেসপন্স জিরো। ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এমনটাই জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম।
অধ্যাপক বদরুল আলম বলেন, তার অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। সোমবার তাকে আমরা আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করেছি, মানে হচ্ছে ওয়ান স্টেপ ডাউন। এখানে আমরা কয়েকটা দিন দেখবো, মোটামুটি যদি এ সময়টায় ভালো থাকে তাহলে কেবিনে নিয়ে যাবো। ওয়াহিদা খানমের ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিল, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডান সাইড ছাড়া মোটামুটি সবকিছুই কাজ করছে এবং সে এখন একটু খাবারও খেতে পারছে। এগুলো ভালো লক্ষণ। তার জিসিএস স্কোর ১৫-তে আছে। এখানে উল্লেখ্য, একজন স্বাভাবিক মানুষের গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) ১৪-১৫ থাকে, জিসিএস ৮-এ নেমে এলে তাকে ক্রিটিক্যাল বলে ধরা হয়। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম কবে নাগাদ এবং কতটুকু রিকভার করবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, রিকভার বিষয়টা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে ডান সাইড প্রসঙ্গে কোনও সম্ভাব্য মন্তব্য করা সম্ভব না। তবে এরকম থাকবে না, অনেক উন্নতি হবে বলেই আশা করছেন তার চিকিৎসা বোর্ডের চিকিৎসকরা। তারা দাবি করেন, ‘ওয়াহিদার বয়স কম বলেই আমরা আশাবাদী হতে পারছি। তিন থেকে ছয় মাস পরে মোটামুটি সুস্থ হবেন তিনি। তবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এ সময়ের মধ্যে এতটা সাহস করেও আমরা বলতে পারছি না। কারণ, তার ডান হাত, ডান পা জিরো।’
ওয়াহিদা খানমের জ্ঞান ফেরার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও জানান অধ্যাপক বদরুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গেও কথা বলছেন। তবে সেদিনের ঘটনা আমরা ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করি না। তাতে সে ইমোশনাল হয়ে যেতে পারেন। এটি আমরা চাই না। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেছেন। হাসপাতালে কখন এসেছেন সেটা মনে করতে পারছেন না। ওয়াহিদা আজকেই প্রথম মনে করতে পেরেছেন তিনি হাসপাতালে ছিলেন। তার স্বামীকে প্রতিদিন তাকে ১০ মিনিটের জন্য আমরা দেখা করতে দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, আমরা চাই ওয়াহিদা যেন আগের মতো সার্ভিসে ফিরে যেতে পারে, সে তার কাজ করতে পারে। কিন্তু এটা করতে কতদিন লাগবে বা কোন পর্যায়ে যেতে পারবে, এই মুহূর্তে মন্তব্য করা যাবে না।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন। ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমান তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।