যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৭ কোটি টাকা জালিয়াতি কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবদানে সময়সীমা পার হবার পর সালামের চিঠি নিয়ে ধূম্রজাল

0

তহীদ মনি ॥ যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ৭ কোটির অধিক টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাটের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তকৃত আব্দুস সালামের একটি চিঠি নিয়ে নানা প্রশ্ন ও গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। হিসাব বিভাগের সাবেক এই কর্মচারীর কাছে পাঠানো কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবদানের সময়সীমা পার হবার পরও ওই চিঠি কার মারফত পেয়েছে বোর্ড।
তার আগেই বিভাগীয় ব্যবস্থার পরবর্তী ধাপ সম্পন্নের জন্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। চিঠির বিষয়টি তদন্ত কমিটি যেমন জানেনা তেমন এর গন্তব্য বা করণীয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার চিঠির ভিতরে ব্যবহৃত তারিখের আগের দিন চিঠি পোস্ট করা হয়েছে। এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, রোববার দিনভর বোর্ডপাড়ায় গুঞ্জন ছিল আত্মস্বীকৃতি অপরাধী আব্দুস সালাম তার সহযোগীদের নাম উল্লেখ করে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে জবানবন্দিমূলক চিঠি পাঠিয়েছেন। অবশ্য, বোর্ড সচিব জানিয়েছেন, চিঠিতে শুধু ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত বছর অক্টোবরে শিক্ষা বোর্ডের ৭ কোটির অধিক টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে। একই মাসে যশোর দুর্নীতি দমন কমিশন অফিস ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। এই মামলার ৩ নং আসামি ছিলেন বরখাস্তকৃত হিসাব সহকারী আবদুস সালাম। অন্য আসামিরা হলেন, তদন্তকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমির হোসেন, তৎকালীন সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজা, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং-এর মালিক আশরাফুল ইসলাম বাবু ও মেসার্স শাহী লাল স্টোরের মালিক বাবু।
আব্দুস সালাম কর্মচারী হওয়ায় শিক্ষা বোর্ড তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় ফেব্রুয়ারি মাসে। এর আগে গত অক্টোবের থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সময় থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানা যায়। বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ধাপ হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠায় বোর্ড। এতে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য অথবা, ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে তাও লিখিত জানাতে ১০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। গত ৮ মার্চ সে সময় শেষ হয়েছে। এরপর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান গত ১০ মার্চ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তকৃত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম নোটিশের জবাব দেননি বা ব্যক্তিগত শুনানি চাননি। সরকারি কর্মচারী বিধি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৭(৩) ধারা এবং বোর্ড কর্মচারী প্রতিষ্ঠানমালা ৩৯ (গ) ধারায় তাদেরকে তদন্ত সাপেক্ষে সুপারিশের নির্দেশনা দেওয়া হয়। যে দিন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সে দিন বোর্ড চেয়ারম্যানের দফতর ডাকযোগে আব্দুস সালামের চিঠি পায়। সচিব প্রফেসর মো. আব্দুল সালেক সরকার রোববার চিঠিটি গ্রহণ করেন।
কমিটি গঠিত হওয়ার পর পাওয়া এই চিঠি নানা প্রশ্ন ও গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে। দিনভর শিক্ষা বোর্ড পাড়ায় গুঞ্জন ছিল চিঠিতে সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যানসহ জড়িত সকলের নাম উল্লেখ করে লিখিত জবানবন্দি রয়েছে। চিঠির বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধন চন্দ্র রুদ্রের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ জাতীয় চিঠি তার হাতে পৌঁছেনি। শিক্ষা বোর্ড সচিব বলেন, জাতীয় চিঠি আগে পেলে তো তদন্ত কমিটি গঠন করা লাগে না। যেহেতু নির্ধারিত সময়ের পর চিঠি এসেছে সেহেতু ‘গৃহীত হলো না’ মর্মে হলেও উত্তর দিতে হয়। চিঠিও গ্রহণ করা হলে আবার তদন্ত কমিটিও গঠিত হলো, এ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকাটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, চিঠির খামের উপর ৫ মার্চ তারিখ থাকলেও ভেতরে সালামের স্বাক্ষর ৬ মার্চের। এছাড়া ৫ মার্চ ছিল শনিবার। যা একটি জট পাকানো অবস্থায় পৌঁছেছে। আব্দুস সালামের পত্রে কাউকে দায়ী করে জবানবন্দি আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাতে ২০ মার্চ পর্যন্ত কারণ দর্শানোর সময় বৃদ্ধির আবেদন রয়েছে। এর বেশি কিছু না।