আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এক সাথে যায় না : খন্দকার মোশাররফ

0

মাসুদ রানা বাবু॥ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এক সাথে যায় না। তাই আওয়ামী লীগকে হটানো ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। মেশিনে নয় জনগণ নিজের হাতে ভোট দিয়ে যেন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে এই সৃযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এটি কেবল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নয় সমগ্র জনগণের একটিই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণের যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনে তরিকুল ইসলামের মত নেতার বড় অভাব। আজকে দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তরিকুল ইসলামের মতো নেতার বড় প্রয়োজন। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বরেণ্য এই রাজনীতিকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির আয়োজনে  রবিবার স্থানীয় জেলা পরিষদ মিলানয়তনে এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, তরিকুল ইসলাম নির্যাতিত, নিপীড়িত, সাহসী, দৃঢ়চিত্ত, আপোষহীন, সংগ্রামী, মজলুম রাজনৈতিক নেতার একজন রোল মডেল । তিনি শুধু যশোর উন্নয়নের রূপকার নন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাকশালের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে জনগণকে স্বনির্ভর ও আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের যে রূপরেখার তার সাথেও তরিকুল ইসলাম জড়িত। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে যশোরের মত অবদান রেখেছেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, তিনি (তরিকুল ইসলাম) ছাত্র জীবন থেকে সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সরকারি এম এম কলেজ ছাত্র সংসদের জি এস ছিলেন। কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে গিয়ে কারাবন্দী ছিলেন। যশোর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন । পরবর্তীকালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দলের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক ত্যাগ, সংগ্রাম, আন্দোলন করে অগ্রসর হয়েছেন। সামরিক শাসক এরশাদ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে আটক করে সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছিল। সেই সামরিক শাসকের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সে সময় অনেকে এরশাদের পক্ষ নিয়েছিলেন, আবার অনেকে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আর তরিকুল ইসলাম অসীম সাহসিকতায় দৃঢ় চিত্তে সীমাহীন নির্যাতন সহ্য করে স্বৈরশাসকের শাসকের কাছে আত্মসমর্পন করেননি। তিনি সব সময় স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং জাতীয় স্বার্থের পক্ষে কথা বলতেন। কখনো আপোষ করেননি। সেই তরিকুল ইসলাম এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
তিনি বলেন, আজকে ভোট ডাকাতির সরকার বাংলাদেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। তারা দেশকে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তারা টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্র হত্যা করেছে। সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, মুদ্রা পাচারের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি হয় না। জ্বালানি ও বিদুতের তীব্র সংকট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি এ সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ ’৭৫-এ বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। আজকে সেই আওয়ামী লীগ টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এই সরকার রেখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব এই সরকারকে পদত্যাগ ও অবৈধ সংসদকে বাতিলে বাধ্য করতে হবে। গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে এনে স্বাভাবিক রাজনীতি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। তার জন্য যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে তরিকুল ইসলামের মত নেতার বড়ই অভাব। তিনি তার জীবনের ত্যাগ তিতীক্ষা, আন্দোলন সংগ্রাম, জেল জুলুমের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক শিক্ষার উদাহরণ রেখে গেছেন সেটি অনুসরণ করে দেশে বিরাজমান বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তরিকুল ইসলাম আমাদের মাঝে না থাকলেও তার রাজনৈতিক ভাবনা, চিন্তা, আদর্শ, দর্শন সার্বক্ষিণকভাবে আমাদের মাঝে আছে। একজন তরিকুল ইসলাম তৈরি হয় দিনের পর দিন বছরে পর বছর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে। মহান এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীকে হটিয়ে এই নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে হবে। আজকে নানা ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে যে আন্দোলন করছি তার পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে তরিকুল ইসলামের স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে।
আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ষাটের দশকের প্রথমে দেশব্যাপী উত্তাল ছাত্র আন্দোলনে এই প্রগতিশীল যশোর অঞ্চলের মানুষের মাঝ দিয়ে যে তরুণ নেতৃত্ব বেড়ে ওঠে সেই নেতৃত্বের সামনে আসেন তরিকুল ইসলাম। তরিকুল ইসলাম সব সময় দেশের আধিপত্যপাত বিরোধী এবং দেশের কৃষক, শ্রমিক,মেহনতি মানুষের পক্ষে রাজনীতি করেছেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আসাদুজ্জামান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বকুল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান কবির, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফ আহমেদ আলম, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড.সৈয়দ ইফতেখার আলী, যশোর জেলা বিএনিপির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এমএ মজিদ, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান খান, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, আঞ্জুরুল হক খোকন, খায়রুজ্জামান মধু, আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, জহিরুল ইসলাম, আব্দুল হাই মনা, কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, জেলা যুবদলের সভাপতি এম. তমাল আহমেদ, সদর উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী হাসিনা ইউসুফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দেলের সভাপতি রবিউল ইসলাম প্রমুখ। স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মীনি জেলা বিএনপির অহ্বায়ক নার্গিস বেগম, বড় ছেলে দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও ছোট ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য মুনির আহমেদ সি্িদ্দকী বাচ্চু।