জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ কাজ করছে না। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান- কারও কোনো কূটনীতি কাজ করছে না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একগুঁয়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনে। এতে সবার চোখের সামনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে একটি স্বাধীন দেশ। দেশটিতে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ। জার্মান পত্রিকা ওয়েল্ট অ্যাম সোটাগ’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাশিয়া হয়তো ইউক্রেন আগ্রাসনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। এমনটা করা হলে তা হবে যুদ্ধাপরাধ। তিনি বলেন, কয়েকদিনে আমরা রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ শুনে আসছি। তবে এ দাবিকে ক্রেমলিন মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই অভিযোগই বাস্তব হয়ে থাকতে পারে। কারণ, রাশিয়া মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে দেয়ার জন্য জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের লাভিভ শহরে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সেখানকার সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল পিসকিপিং অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারে আকাশ থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩৪ জন। এর মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে অবস্থান করছেন ন্যাটো সদস্যরা। তাদের থেকে অনতিদূরে এই সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে কমপক্ষে ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। এসব তথ্য দিয়েছেন লাভিভ অঞ্চলের গভর্নর মাকসিম কোজিতস্কি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়ার সেনারা। তাদেরকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত কিয়েভের সশস্ত্র যোদ্ধারা। এমন সতর্কতা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। রাজধানীতে সর্বোত হামলা হলে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কিয়েভকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে না দেয়া পর্যন্ত ওই শহরকে দখল করতে পারবে না রাশিয়া। এই যুদ্ধে কতোজন বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ পর্যন্ত যুদ্ধে তার দেশের কমপক্ষে ১৩০০ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ৫০০-৬০০ রাশিয়ান সেনা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে রাশিয়া। দখলীকৃত শহর মারিউপোলের মানুষ হিমাঙ্ক তাপমাত্রায় পানি, বিদ্যুৎহীন এবং সামান্য খাদ্য নিয়ে অবর্ণনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বিবিসি বলছে, লুহানস্কের সভারোদোনেৎস্ক, রুবিজনে ভারী গোলা নিক্ষেপ করছে রাশিয়া। এতে সেখানে কয়েক ডজন এপার্টমেন্ট ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। এ তথ্য দিয়েছে ইউক্রেনিয়ান স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস। বেসরকারি বাড়িঘর ও এপার্টমেন্ট সহ কমপক্ষে ৬০টি স্থাপনায় রাতভর হামলা করা হয়েছে। ইউক্রেনিয়ান স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস থেকে টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করে বলা হয়েছে, লুহানস্ক অঞ্চলকে ভাঙতে পারবে না শত্রুরা। আসুন আমরা জেগে উঠি। সবকিছুই হবে ইউক্রেনের। কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের মতে, রাতভর হামলা চালানো হয়েছে ইউক্রেনে। এ সময় বাজানো হয়েছে সাইরেন। পত্রিকাটি আরও বলেছে, ইউক্রেনের প্রতিটি অঞ্চলে এয়ার রেইড এলার্ট বাজানো হয়েছে ভোরের দিকে। ওদিকে গতকাল রোববার পশ্চিমাঞ্চলীয় ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরের কাছে একটি বিমানবন্দরেও হামলা করা হয়েছে। মলদোভার প্রধানমন্ত্রী নাতালিয়া গাভরিলিটা বলেছেন, ইউক্রেন থেকে যেভাবে দলে দলে শরণার্থী প্রবেশ করছেন তার দেশে, তা সামাল দিতে তাদের সহায়তা প্রয়োজন। ওদিকে মারিউপোল শহরের মানুষ হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় অবর্ণনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের কাছে আছে সামান্য খাদ্য। বিদ্যুৎ নেই। পানিও নেই বললেই চলে। রাশিয়ার সেনারা ওই শহরে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দিচ্ছে না। ইউক্রেন দাবি করেছে, নারী ও শিশুদের উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে আনার সময় রাজধানী কিয়েভের কাছে একটি গ্রামে গাড়িবহরে বোমা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে কমপক্ষে সাত জন নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে মস্কো কোনো মন্তব্য করেনি।