ঝিনাইদহে সেচ লাইসেন্স পেতে বিলম্ব, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে ‘কাছা মারতে মারতে কাইজ্যা শেষ।’ প্রবাদ বাক্যের মতোই এমন দশা হয়েছে সেচ লাইসেন্স নিতে ইচ্ছুক ঝিনাইদহের কৃষকদের। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তাৎক্ষণিক সেচ লাইসেন্স প্রাপ্তির আশা পরিণত হচ্ছে দুরাশায়। কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী একটি সেচ লাইসেন্স নিতে আবেদন করা থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে সময় লেগে যাচ্ছে দুই থেকে তিনমাস। বিএডিসির কর্মকর্তারা তদন্ত শেষ করে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় সেচ কমিটির অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ প্রতি মাসে একবার সেচ কমিটির এই সভা হয়ে থাকে। এই দীর্ঘ অপেক্ষা কৃষকদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা যথাসময়ে ঠিকমতো আবাদ করতে পারছেন না। তাৎক্ষণিক সেচ লাইসেন্স প্রাপ্তির সহজ উপায় না থাকায় ডিজেল কিনে আবাদ করতে গিয়ে কৃষকরা ফতুর হচ্ছেন।
হরিণাকুন্ডুর কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, ইরি মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তিনি সেচ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। তার আশা ছিল এবার মটর দিয়ে আবাদ করবেন। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মারপ্যাচে দ্রুত তিনি লাইসেন্স পাননি। ফলে উচ্চ মূল্যের ডিজেল কিনে তাকে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। সাধুহাটীর কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, আবেদন করা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় মাস চলে গেছে, কিন্তু এখনো তিনি লাইসেন্স পাননি। ইতিমধ্যে ইরি মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি লাইসেন্স পেলেও কোন কাজে আসবে না। পরবর্তী মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কৃষক মহিউদ্দীন জানান, কৃষকদের স্বার্থ ও গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৯ সালে ঝিনাইদহের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলাম এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সেচ লাইসেন্স দিতেন। তিনি কৃষকদের মৌসুমকে প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু এখন প্রজ্ঞাপন মানতে গিয়ে জেলার ৬টি উপজেলায় সেচ লইসেন্স পেতে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ মে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ‘কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা’ আইন প্রণয়ন করেন। বিদ্যমান এই আইনে বলা হয়েছে, আবেদন প্রাপ্তির এক সপ্তাহের মধ্যে স্থান ও তথ্যাবলীর সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির সদস্যরা সরেজমিন সেচ এলাকা পরিদর্শন করে মন্তব্য ও সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে প্রস্তুত করে ২০ দিনের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কাছে দাখিল করবেন। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর উপজেলা সেচ কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু এই সহজ আইনটি কৃষকদের ক্ষেত্রে আরো জটিল করে তোলা হয়েছে। লোকবল না থাকায় ঝিনাইদহ বিএডিসির সেচ বিভাগ কোন প্রতিবেদনই ২০ দিনের মধ্যে দিতে পারে না। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিএডিসি’র কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন জানান, ‘আমরা আবেদন হাতে পেলে দ্রুত প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠিয়ে দিই। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোন গাফিলতি নেই।’ ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম শাহিন বলেন, ‘সেচ লাইসেন্সের ফাইল দ্রুত আমরা ছেড়ে দিয়ে থাকি। বিএডিসি থেকে এই ফাইল আসতে দেরি হয়। তারাই মূলত এই দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী। সেখান থেকে যতদ্রুত ফাইল আসবে, তত দ্রুত সেচ লাইসেন্স পাবেন কৃষকরা।’