সর্বজনীন পেনশন চালু হলে মাসে মিলবে ৬৪৭৭৬ টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সরকার আগামী বছর থেকে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। এ পেনশন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য-দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতা আনা। যাতে বৃদ্ধ বয়সে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রেস ব্রিফিংয়ে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’র বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
সেখানে বলা হয়, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক এ পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। সময়কাল ও মাসিক চাঁদার অনুপাত অনুযায়ী পেনশন ধারীরা অবসরকালে মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন। প্রাথমিকভাবে অনুমানভিত্তিক একটি ধারণা উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
পেনশন ব্যবস্থার অনুমানভিত্তিক হিসাব
কেউ যদি ১৮ বছর বয়সে পেনশন হিসাবে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা জমা শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত নিয়মিত চাঁদা জমা দেন, তাহলে অবসরের পর তিনি পেনশন পাবেন। অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি প্রতি মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা হারে পেনশনের টাকা পাবেন
আবার কেউ যদি ৩০ বছর বয়সে পেনশন হিসাবে টাকা জমা দিতে শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত নিয়মিত চাঁদা জমা করেন, তাহলে অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন পাবেন। সেক্ষেত্রে মাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা করে পাবেন পেনশনধারীরা। তবে চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনের পরিমাণও বেশি হবে। তবে এটি সম্পূর্ণ আনুমানিক একটি হিসাব বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালুর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি কৌশলপত্রটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে শিগগির একটি সর্বজনীন পেনশন আইন প্রণয়ন করা হবে। আইন প্রণয়ন হলে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা পাওয়া যাবে। এটি নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি।
মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সুবিধা ভোগ করছি। আমাদের বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ বছর, যা ২০৫০ সালে ৮০ বছর এবং ২০৭৫ সালে ৮৫ বছর হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় আগামী তিন দশকে একজন কর্মজীবী ব্যক্তি অবসর গ্রহণের পরও গড়ে ২০ বছর আয়ু থাকবে। বাংলাদেশে বর্তমানে নির্ভরশীলতার হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০৫০ সালে ২৪ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে ৪৮ শতাংশে উন্নীত হবে। গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল হার বিবেচনায় আমাদের বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তা হিসেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা খুবই জরুরি।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ বিষয়ে প্রণীত কৌশলপত্রের ওপর অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। এসময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৩২ পৃষ্ঠার খসড়া কৌশলপত্রে নতুন এ পেনশন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকসহ বিভিন্ন দেশে চলমান পেনশন ব্যবস্থা তুলে ধরা হয়
কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন হলো জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক
জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে, যা পরে বাধ্যতামূলক করা হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সরকার যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে, ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। এ পেনশন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ারও সুযোগ থাকবে। তবে এক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। সুবিধাভোগী বছরে ন্যূনতম বাৎসরিক জমা নিশ্চিত করবে। অন্যথায় তার হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হবে এবং পরবর্তীতে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে হিসাব সচল করা হবে। সুবিধাভোগী আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বর্ধিত অর্থ জমা করতে পারবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা (৬০ বছর) পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে।