মালয়েশিয়ায় পাচারে প্রতিবন্ধী তরুণীরা ছিল মা-মেয়ের টার্গেট

0

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়॥ রাজধানীর মুগদা এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীদের খোঁজ নিতেন আকলিমা বেগম (৪২) ও তার মেয়ে সাথী আক্তার। এভাবে কারও খোঁজ পেলে ধীরে ধীরে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তেন সাথী। সম্পর্কের সূত্র ধরে কৌশলে ভুক্তভোগীদের বাসা থেকে নিয়ে আসতেন সাথী। এরপর তাদের আটকে রেখে মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টা করতেন। তবে কাউকে পাচারের তথ্য এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ। সম্প্রতি ভিকটিম এক তরুণীকে উদ্ধারসহ আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সদস্য ওই মা-মেয়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণীকে আটকে রাখার তথ্য জানিয়েছে উদ্ধার হওয়া ওই তরুণী। পুলিশ বলছে, টানা ১৯ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল ১৫ বছর বয়সী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পপি (ছদ্মনাম)। তার মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ-খবর নিয়ে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় পপিকে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের ওই দুই সদস্যকে। পপির সঙ্গে আরও ১০ থেকে ১২ জন তরুণীকে আটকে রেখেছিলেন তারা। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এসব তরুণীকে মালয়েশিয়া পাচার করতে চেয়েছিলেন আকলিমা ও তার মেয়ে সাথী।
ভুক্তভোগী পপির মা বলেন, আমি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করি। আমার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েকে বাসায় (উত্তর মান্ডা এলাকায়) রেখে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজে যাই। প্রতিদিনের মতো গত ২৭ জানুয়ারি মেয়েকে বাসায় রেখে কাজে যাই। বাসা-বাড়িতে কাজ শেষে দুপুর ২টার দিকে বাসায় এসে দেখি, পপি বাসায় নেই। এরপর আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন জনের কাছে খোঁজ নিয়েও মেয়ের সন্ধান পাইনি। পরে উপায় না দেখে ২৮ জানুয়ারি মুগদা থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। জিডি করার পর মুগদা থানা পুলিশসহ আমার আত্মীয়-স্বজনরা পপিকে খোঁজ করতে থাকেন। তিনি বলেন, পাচার চক্রের সদস্য সাথী আক্তার আমার মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় বাসায় আসতো। আমার মেয়ে নিখোঁজের পর সাথীর বাসায় গিয়েও সন্ধান করার চেষ্টা করি। কিন্তু গিয়ে দেখি বাসা তালাবদ্ধ। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে করতে জানতে পারি, আকলিমা বেগম ও তার মেয়ে সাথী আক্তার আমার মেয়েকে জোর করে আটকে রেখেছে।
পপির মা আরও বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই বাসা থেকে আমার মেয়ে যেকোনোভাবে বাইরে চলে আসে। এরপর স্থানীয় লোকজন রাস্তায় আমার মেয়েকে দেখেন এবং হারানো বিজ্ঞপ্তির পোস্টারে ছবি দেখে আমাকে ফোন করেন। ফোন পেয়েই আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও সেখানে হাজির হয়। এরপর আমার মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি বলেন, আটকে রাখার ১৯ দিন নিয়মিত খাবার দিলেও সবসময় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখতো। আমার মেয়ের বয়স ১৫ বছর। কিন্তু পাচারকারীরা মেয়ের বয়স বাড়িয়ে ১৯ বছর করে পাসপোর্ট করেছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম আকতার সরকার বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণী নিখোঁজের জিডি হয় মুগদা থানায়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে অভিযান চালিয়ে তরুণীটিকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানে গ্রেফতার করা হয় দুই অপহরণকারীকে, তারা সম্পর্কে মা-মেয়ে। তিনি বলেন, গত ১৯ দিন ধরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণীদের ময়মনসিংহসহ একাধিক এলাকায় রেখেছিল চক্রটি। ওই তরুণীদের আটকে রেখে তাদের পাসপোর্ট করার চেষ্টা করছিল চক্রটি। পাসপোর্ট করতেই পপিকে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আনেন তারা। এরপর পপিকে উদ্ধার ও পাচারকারী চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
উদ্ধার হওয়ার পর পপি জানায়, তার সঙ্গে আরও ১০ থেকে ১২ জন মেয়েকে পাচারের জন্য আটকে রাখা হয়। ময়মনসিংহে যেখানে তাদের আটকে রেখেছিল সেখানে টানা ১৯ দিন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রেখেছিল তাদের। গ্রেফতার দুজনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে মুগদা থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার পাচারকারীরা তরুণীদের পাচার করেছে কি না জানতে চাইলে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল উদ্দিন মীর বলেন, আগে পাচার করেছে কি না এখনো তারা স্বীকার করেনি। তবে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে জানা যাবে। টানা ১৯ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল ১৫ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি। আমাদের থানা পুলিশের টিম অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করে।