যেভাবে উত্থান বাপ্পি লাহিড়ীর

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বয়স তখন সবে ৩। মঞ্চে তবলা বাজাতে শুরু করে ছোট্ট অলকেশ লাহিড়ী, সেই ছোট ছেলেটাই একদিন হয়ে ওঠে ভারতের ‘ডিস্কো কিং’। যাকে সবাই চেনে ‘বাপ্পি লাহিড়ী’ নামে। ১৯৫২ সালের ১৭ই নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্ম বাপ্পি লাহিড়ীর। ছোট থেকেই সুরের জগতের মানুষ ছিলেন বাপ্পি, তার বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন বাংলা সংগীতের জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়ী ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। বাপ্পি লাহিড়ী শুধু একজন সংগীত পরিচালকই ছিলেন না, প্লে-ব্যাকও করেছেন সমানতালে। পিতা-মাতার সান্নিধ্যেই তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি।
১৯ বছর বয়সে ‘দাদু’ (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন এ শিল্পী। গানের জগতের সফরটা বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে শুরু করলেও খুব দ্রুতই মুম্বইয়ে পাড়ি দেন তিনি।
স্বপ্ন ছিল মামার (কিশোর কুমার) মতো বলিউডে রাজত্ব করবেন। বলিউডে তার প্রথম কাজ ছিল ‘নানহা শিকারি’ (১৯৭৩), এই ছবিতে গীতিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পরিচালক তাহির হুসনের ‘জখমি’ ছবিতে গান লেখার পাশাপাশি গেয়েওছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। আশির দশকের বলিউডে উল্কা গতিতে তার উত্থান। পরপর হিন্দি ছবিতে কম্পোজ করা সুর থেকে তার গানে বুঁদ হয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল। মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ ছবির মিউজিক কম্পোজ করে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার জনপ্রিয়তা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশে। এরপর থেকেই ‘ডিস্কো কিং’ নামে পরিচিতি লাভ করেন এই বাঙালি গায়ক। ডিস্কো মিউজিকের ব্যবহার তার মতো আগে কেউ করেনি ভারতীয় সিনেমায়। কিশোর কুমার, আশা ভোঁসলে থেকে ঊষা উত্থুপ, রথী-মহারথীদের সঙ্গে কাজ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। সুরক্ষা, ওয়ারদাত, চলতে চলতে, কমান্ডো, ইলজাম, ডিস্কো ড্যান্সার, ড্যান্স ড্যান্স, ফিল্ম হি ফিল্ম, সাহেব, টারজান, কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি, নমক হালাল- অজস্র হিন্দি ছবির সুপারহিট গানের স্রষ্টা তিনি। ‘শরাবী’ ছবির গান কম্পোজ করে ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার এসেছিল তার ঝুলিতে। শুধু সংগীত পরিচালনা নয়, গায়ক বাপ্পি লাহিড়ীও কম জনপ্রিয় ছিলেন না।
তার হিন্দি উচ্চারণে বাংলা টান ছিল স্পষ্ট, সেই বাঙালিয়ানা আজীবন কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। বা বলা যায় সেই বাংলা টান কাটানোর চেষ্টা ছিলই না তার মধ্যে। শুধুমাত্র ‘ডিস্কো সংগীত’র মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বাপ্পি লাহিড়ী। বেশকিছু গজলও রচনা করেছেন তিনি। শুধু ‘বাপ্পিদা’র গান নয়, তার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বরাবর ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সোনার প্রতি তার অনুরাগ কারও অজানা নয়। তার হাসিও কম জনপ্রিয় ছিল না, সবসময় ঠোঁটের কোণে লেগে থাকতো সেই হাসি। গতকাল সকলকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা সংগীত জগৎ।