এ অবক্ষয় থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে হবে

0

আমাদের ছাত্রসমাজের অবক্ষয়ের অভিযোগ একেবারে নতুন নয়। বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ হরহামেশায় ওঠে। রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ছাড়াও খুন-খারাবিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। দু’দশক আগে ‘ডাকাতের গ্রাম ঢাবি’ আখ্যার যে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল তা নিশ্চয় আর হবে না। রাজপথে দর্জি শ্রমিক বিশ্বজিৎ এবং বুয়েটে আবরার হত্যার পর ছাত্রদের নিয়ে গর্ব করার তেমন কিছুই নেই। জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসবের পর সারাদেশে কত যে ধর্ষণ শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে তা বলার প্রয়োজন নেই। শুধু ছাত্র আত্মহত্যার হিসাব করলেই ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠবে। ছাত্র-ছাত্রীদের বসে যাওয়ার এসব দিকে যেহেতু অনেকদিন ধরে চলছে, সেহেতু এ নিয়ে তৈরি হয়েছে গাসহাভাব। মানুষ ঘৃণায় এ নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। কিন্তু গত সোমবার ভালোবাসা দিবসের রাতে যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে আলোচনা না করাই অন্যায়। অথচ, ঘটনার প্রেক্ষাপটে আলোচনার ভাষাই কেড়ে নিয়েছে। তৈরি করেছে সংকট। ঘটনাটি হচ্ছে, আমাদের কলেজপড়া ৯ ছাত্র কুমিল্লায় পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের সময় ২৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তারা টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছিলেন। সোমবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আমতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার র‌্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, গ্রেফতাররা হলেন-কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরপাড়াতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে তোফায়েল আহমেদ (১৯), একই এলাকার মাজাহারুল ইসলামের ছেলে আশিকুল ইসলাম (১৯), ময়মনসিংহের পাগলা উপজেলার দত্তের বাজার গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে মিনহাজুল ইসলাম রিফাত (২২), পটুয়াখালী সদর উপজেলার পশুরবুনিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে সোহেল (২১), নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামের কামরুল হাসানের ছেলে মিতুল হাসান মাহফুজ (২২), গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার আমবাগ (কোনাবাড়ী) গ্রামের মৃত মাসুদ ইসলামের ছেলে সিয়াম ইসলাম (১৯), ময়মনসিংহের পাগলা উপজেলার বাকশি (পাঠানবাড়ী) গ্রামের ফখরুদ্দিন পাঠানের ছেলে রিশাত পাঠান (২২), ময়মনসিংহের পাগলা উপজেলার নয়াবাড়ী গ্রামের আসাদ মিয়ার ছেলে গোলাপ (২২) ও ময়মনসিংহের পাগলা উপজেলার বাগশি গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে সেলিম (২২)।
র‌্যাব আরও জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, পাকস্থলীতে করে তারা ঢাকায় ইয়াবা পাচার করছিলেন। তারা সবাই কলেজপড়ুয়া এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকদের সহায়তায় তাদের পাকস্থলী থেকে ২৩ হাজার ৯৯০ পিসি ইয়াবা ট্যাবলেট বের করা হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। র‌্যাবের হাতে আটক এবং তাদের স্বীকারোক্তির পর আসলেই বলার কিছু আছে কি-না তা আমরা বুঝতে পারছি না। কলেজপড়–য়া ছাত্র পাকস্থলীতে করে হাজার হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাচার করবে এটা ভাবতেই তো জ্ঞান হারানোর অবস্থা হচ্ছে। ওরা মাধ্যমিক পরিবারের হোক আর ধনী কিম্বা গরিব হোক তাদের পরিচয় তো ছাত্র। অভাবের জন্য তারা এ কাজ করেনি তা অবশ্যই বলা যায়। এটা তারা করেছে চরম অবক্ষয় ও লোভের কারণে। রাতারাতি ধনী হতেই তারা এ কাজ করেছে।
আমরা ছাত্রসমাজে একাংশের এমন সব কান্ডে হতবাক, বিষ্মিত, ব্যথিত, মর্মাহত। আমরা উদ্বিগ্ন আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে। আমরা মনে করি, এদের সুপথে ফেরাতে পরিকল্পিত প্রকল্প নেয়া অত্যন্ত জরুরি।