বিদ্যুতের মূল্য উন্নয়নে অন্তরায়

0

জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক আধুনিক বিশ্বে বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অকল্পনীয়। শুধু বাতি বা বৈদ্যুতিক পাখা নয়, বহু ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামই এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে শিল্প-কলকারখানা, কর্মসংস্থান সব কিছুই এখন মূলত বিদ্যুৎফনর্ভর। সে কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে বিদ্যুতের চাহিদা। নিকট অতীতে সেই চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়ায় দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপি সরকার তার দুই মেয়াদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শহর ও পল্লীতে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করে। ওয়ান ইলেভেনে তা থমকে যায়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারও দেওয়া হয়। তার ফলও ফলতে শুরু করেছে। টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে উৎপাদন ও আমদানি বহাল রাখেন। সরকার দাবি করছে, দেশের ৯৯.৮৫ শতাংশ মানুষ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। বাকি ০.১৫ শতাংশ মানুষকেও বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পাওয়ার সেল আশা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বলছে, শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজটি মোটেও সহজ কোনো কাজ ছিল না। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান বিদ্যুতায়নের দিক থেকে এক যুগ আগে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। আজ বাংলাদেশ বিদ্যুতায়নে তাদের পেছনে ফেলেছে। বাংলাদেশে যেখানে ৯৯.৮৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়, সেখানে ভারতে এই হার ৯৮.৮ শতাংশ আর পাকিস্তানে মাত্র ৭৪ শতাংশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশের এই অর্জন নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর জন্য বাংলাদেশকে যে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, তা রীতিমতো অকল্পনীয়। পাওয়ার সেলের তথ্যানুসারে ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭, আর এখন সেই সংখ্যা হয়েছে ১৪৬। সে সময় বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, আর এখন উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। তখন দেশে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ, এখন চার কোটি ১৪ লাখ। এ জন্য দেশব্যাপী সঞ্চালন লাইন বাড়াতে হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বসতি বিস্তৃত হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চলেও মানুষের বসবাস বেড়েছে এবং তারা বিদ্যুতের আওতায় আসছে।
একথা সবাই জানে, দেশে শিল্পায়নের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের পর্যাপ্ততা। সরকারি ঘোষণায় বলা চলে সে কাজটির একটি বড় অংশই সম্পন্ন হয়েছে। আর তার ফলও ফলছে। তবে এতে দেশে শিল্পায়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আসার গতি সেভাবে বাড়েনি। ফলে, কর্মসংস্থানও বাড়েনি। এর প্রধান কারণ বিদ্যুতে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। এখন বিদ্যুৎ সুবিধা কিভাবে আরো সুলভ ও সহজলভ্য করা যায় সেই চেষ্টা চালাতে হবে। ঝড়-ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সঞ্চালনব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা মনে করি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনমান যেভাবে এগিয়ে যাবার কথা তা থমকে যাচ্ছে বিদ্যুতের আকাশ ছোঁয়া মূল্য ও দুর্বল সঞ্চালন ব্যবস্থা। সরকারকে এ দুটো দিক অবশ্যই দেখতে হবে।