মৃত্যুদন্ডতেও ভীত নয় ধর্ষকরা

0
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার পরও থেমে নেই পাশবিক ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা। নরপশুদের হাত থেকে রা পাচ্ছে না শিার্থী, গৃহবধূ, কর্মজীবী নারী, এমনকি শিশুরাও। গত মঙ্গলবার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলমান না থাকায় সংশোধিত আইন অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসিড-সন্ত্রাসের মতো ধর্ষণ নামের পাশবিকতা নিয়ন্ত্রণেই তাঁর সরকার আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে খবরের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে ধর্ষণ জাতীয় খবর। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে নববধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ মানুষ দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। রাস্তায় নামে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিােভের মধ্যেই কঠোর আইন হয়। তারপরও ধর্ষণের ঘটনা থেমে নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ৯ জেলায় গত সোমবার চারজনকে এবং এর আগে বিভিন্ন সময় ছয়জনকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও তিন জেলায় তিনজনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গতকালের অনলাইনেও ধর্ষণের খবর দেখা গেছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে। বছর তিনেক আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক দশকে দেশে পাঁচ হাজার ১১৭টি ধর্ষণের মামলা হলেও বিচার হয়েছে ৮৮১টির, সাজা হয়েছে মাত্র ১০১ জনের। গত ৯ মাসে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ হয়েছে ৯৭৩টি। হত্যা হয়েছে ৪৩ জন। জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে- প্রভাবশালীদের হস্তপে, তদন্তের গাফিলতি, তথ্য-প্রমাণের অভাব, স্যা প্রদানে অনীহাসহ নানাবিধ কারণে বেশির ভাগ অপরাধী খালাস পেয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক শ্রেণির ধর্ষকের পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক শিা থাকে না। আরেক শ্রেণি সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী বা গ্যাং বেপরোয়া ধর্ষণ করে। তারা মনে করে, রাজনৈতিক বা পৈত্রিক প্রভাবের কারণে কিছু হবে না। মাদকের আগ্রাসন ও ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় এদের বেপরোয়া করে তোলে। সামাজিক মূল্যবোধের অবয় তো আছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাদকের আগ্রাসন। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় পর্ন এসেছে হাতের মুঠোয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আইন করে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। কারণ, অনেক েেত্র ধর্ষকও বেনিফিট অব ডাউট পেয়ে যায়। আগে আইনে যাবজ্জীবন ছিল; কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদদের মতে, বিচারব্যবস্থার সবচেয়ে বড় গলদ রয়েছে তদন্ত আর প্রমাণে। পুলিশ তদন্ত না করেই প্রথমে মিথ্যা মামলা বলে দেয়, এমন অভিযোগও আছে। ঠিকমতো এজাহারটা না হলে ওই মামলা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আরো অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীায়ও সময় নেয় পুলিশ। এতে আলামত নষ্ট হয়ে যায়। এখন অবশ্য মেডিকেল লাগবে না। শুধু মৃত্যুদণ্ডের আইন হলেই হবে না, দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করে আইনের বিষয়গুলো স্পষ্ট করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক সামাজিক ব্যবস্থা গড়তে হবে। আশা করি, আইন যথাযথভাবে কার্যকর হলো- ধর্ষণ কমে যাবে। তবে তা না হলে ধর্ষণজনিত হত্যাকান্ড বেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকবে।