প্রথমদিনেই লেনদেনের শীর্ষে বেক্সিমকোর সুকুক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রথমদিনেই বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) সুকুক লেনদেনের দিক থেকে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
বেক্সিমকোর সুকুক দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দেশের শেয়ারবাজারে প্রথম কোনো সুকুক’র লেনদেন শুরু হয়। এটির লেনদেন শুরুর দাম ছিল ১১০ টাকা, যা দিনের সর্বোচ্চ দাম। লেনদেনের একপর্যায়ে সুকুকটির দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যায়। তবে অভিহিত মূল্যের ওপর থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
সুকুকটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। লেনদেনের প্রথম দিন ৬ হাজার ৬ বারে সুকুকটির মোট ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭৭২টি ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সর্বোচ্চ ১১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৯৯ টাকা ৫০ পয়সায় এসব ইউনিট লেনদেন হয়েছে। টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ডিএসইর শীর্ষ লেনদেনের তালিকায় আট নম্বরে স্থান হয়েছে সুকুকটির।
বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বাড়ানো এবং বেক্সিমকোর দুটি সরকার অনুমোদিত সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের (তিস্তা সোলার লিমিটেড এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড) বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে গত বছরের জুনে বিএসইসি প্রতিষ্ঠানটির ৩ হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুক অনুমোদন দেয়।
পাঁচ বছর মেয়াদি সিকিউরড কনভার্টেবল অথবা রিডেম্বল অ্যাসেট ব্যাকড এই সুকুক বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়া প্রথম গ্রিন সুকুক। ৩ হাজার কোটি টাকার এই গ্রিন সুকুকের ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওতে উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বাকি ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বেক্সিমকো ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের মধ্যে পাবলিক অফারে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত বছরের ১৬ আগস্ট চাঁদা সংগ্রহ শুরু করে। যার জন্য প্রথম দফায় নির্ধারিত সর্বশেষ সময় ছিল গত বছরের ২৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
প্রথম দফায় বন্ডটির চাহিদার ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭১ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন। এই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন আসে ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
চাহিদার মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি আবেদন পড়ায় সাবস্ক্রিপশনের বা আবেদনের সময় ১০ কার্যদিবস বাড়ায় বেক্সিমকো, যা ৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এ দফায়ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া মেলে না। মাত্র একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকার আবেদন করেন। এর মাধ্যমে বন্ডটিতে মোট আবেদন পড়ে ৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা চাহিদার (৭৫০ কোটি টাকা) মাত্র ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ডেবট সিকিউরিটিজ রুলসের ১২(২) এ ধারা অনুযায়ী, পাবলিক অফারের যেকোনো সিকিউরিটিজে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আবেদন জমা পড়তে হবে। এছাড়া আন্ডাররাইটারের (অবলেখক) ২০ শতাংশ আবেদন পড়লেও যদি ৫০ শতাংশের কম হয়, তাহলে ইস্যুটি বাতিল হবে।
আইনের এ বিষয়টি তুলে ধরে সাবস্ক্রিপশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
নতুন করে সময় পেয়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সুকুকের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ শেষ করে এর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড।
৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বাকি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে বর্তমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে। ১৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে আন্ডাররাইটার, ৪২৩ কোটি টাকা এসেছে পাবলিক সাবক্রিপশন থেকে এবং ৩৩৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
সুকুকের বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের ইউনিটগুলো বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর করে নিতে পারবেন। প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে এটি করা যাবে। এজন্য নির্ধারিত রেকর্ড ডেটের আগের ২০ দিনে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দামের যে ভারিত গড় হবে, তার ২৫ শতাংশ কমে এ শেয়ার পাবেন সুকুকধারীরা।
অর্থাৎ উল্লিখিত সময়ে বেক্সিমকোর শেয়ারের গড় দাম ১০০ টাকা হলে রূপান্তর মূল্য হবে ৭৫ টাকা। তার মানে ১ হাজার টাকার সুকুকের বিপরীতে মিলবে ১৩ দশমিক ৩৩টি শেয়ার। কেউ প্রথম বছর রূপান্তর না করলেও পরবর্তী বছরে এ সুযোগ নিতে পারবেন। কেউ একেবারেই রূপান্তর না করলে, মেয়াদ শেষে নিয়মানুযায়ী বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পাবেন।