খুলনায় বিএনপির মানববন্ধনে পুলিশের লাঠিচার্জ, ৩০ নেতাকর্মী আহত

0

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা ॥ খুলনায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি পুলিশি বাধায় প- হয়েছে। এ সময় পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম মাথা ফেটে রক্তাক্ত জখম হন। ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং করে। এসময় জানানো হয়, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বিনা উস্কানিতে তা-ব চালিয়ে বানচাল করেছে পুলিশ। ‘হত্যার উদ্দেশ্যে’ বিএনপি নেতা ফখরুল আলমসহ নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করায় খুলনা থানার অফিসার (ওসি) ইনচার্জকে প্রত্যাহার ও ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।


দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কালো দিবস স্মরণে বেলা ১১ টায় মহানগর ও জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি শুরুর প্রাক্কালে খুলনা থানার একজন কর্মকর্তা এসে অনুমতি না থাকায় কোন কর্মসূচি পালন করা যাবেনা বলে জানান। বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনে কেএমপিতে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলা হয়। কিন্ত উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা সে কথায় কান না দিয়ে তাদের সিদ্ধান্তেÍ অনড় থাকেন। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করে দেওয়া হয়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খানের সভাপতিত্বে কর্মসূচি শুরু হয়। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীর পরিচালনায় মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম বক্তব্য শুরু করামাত্র থানার ওসি মামুনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা চালায়। তাদের বেধড়ক লাঠিচার্জে ফখরুল আলম ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি গুরুতর আহত হন। আঘাতে ফখরুল আলমের চোখ ও কপাল গুরুতর জখম হয়। তাকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে খুলনা আই হসপিটাল ও শেষে সিটি স্ক্যানের জন্য সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজন বলে জানা গেছে।


পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রির হাত ভেঙে গেছে। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে আহতরা হলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, নগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, আবু মুসা গাজী, হেমায়েত হোসেন, মহিলাদলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মিসেস সেতারা সুলতানা, মোল্লা আইয়ুব হোসেন, নিঘাত সীমা, শামসুন নাহার লিপি, লাভলী, শাহানাজ, আমিন আহমেদ, ফিরোজ খান, খান জিয়াউর রহমান জীবন সহ আরও অনেকে। নগর ও জেলা বিএনপি নেতাদের পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে মহিলাদল কর্মীরা ঘিরে রাখলে পুলিশ বর্বরোচিতভাবে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। অতীতে এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ মহিলাদের ওপর কোন ধরনের হামলা বা লাঠিচার্জ করতো না বলে দলীয় সূত্রের দাবি। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কে ডি ঘোষ রোড, হেলাতলা ও বড় বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট। ব্যবসায়ীরা আতংকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পুলিশও লাঠি ও বন্দুক উচিয়ে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া দেয় ও রাস্তা থেকে ইট কুড়িয়ে নিয়ে পাল্টা নিক্ষেপ করে।


ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। তিনি বলেন, এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে বিএনপি অফিসে বাবুল কাজী নামের এক বিএনপি কর্মীকে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ঘটনার ১০ দিনের মাথায় মারা যান বাবুল কাজী। আজ একই কায়দায় পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা ফখরুল আলমের ওপর খুলনার থানার ওসি মামুন নিজে হামলা চালায়। লাঠির আঘাতে ফখরুল আলমের কপাল ও চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে ওসিকে প্রত্যাহার, বিনা উস্কানিতে পুলিশি হামলার ঘটনার তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এর আগে মানববন্ধন কর্মসূচির শুরুতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির আমির এজাজ খান, শফিকুল আলম তুহিন, মনিরুল হাসান বাপ্পী, তরিকুল ইসলাম জহির ও আবু হোসেন বাবু। বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স ম আব্দুর রহমান, খান জুলফিকার আলী জুলু, অ্যাড. তছলিমা খাতুন ছন্দা, আশরাফুল আলম নান্নু, আজিজুল হাসান দুলু, মুর্শিদ কামাল, এহতেশামুল হক শাওন, শেখ সাদী, সুলতান মাহমুদ, কে এম হুমায়ুন কবির, হাফিজুর রহমান মনি, আশফাকুর রহমান কাকন, মাহবুব হাসান পিয়ারু, তৈয়েবুর রহমান, শফিকুল ইসলাম হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন পরাগ, মাসুদ পারভেজ বাবু, একরামুল হক হেলাল, হাসানুর রশিদ মিরাজ, শেখ ইমাম হোসেন, ইবাদুল হক রুবায়েদ, রফিকুল ইসলাম বাবু, হেলাল আহমেদ সুমন, নুরুল হুদা খান বাবু, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি, খান ইসমাইল হোসেন, সেতারা সুলতানা, গোলাম মোস্তফা তুহিন, তাজিম বিশ^াস, সজীব তালুকর্দা প্রমুখ। অপরদিকে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। হেলাতলা মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে বড় বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পিকচার প্যালেস হয়ে এস এম এ রব শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।