নববর্ষ উদযাপন পরিকল্পনায় ওমিক্রনের ধাক্কা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০২১ সালকে বিদায় জানিয়ে ২০২২ সালকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী। কিন্তু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে ইংরেজি নববর্ষ-২০২২ সালকে ঘিরে নেই তেমন একটা আয়োজন। অনেকটা নিরানন্দের মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। করোনা মহামারির মাঝেই আরও একটি বছর কাটলো পৃথিবীর মানুষের। এবছর বিশ্বব্যাপী টিকা কর্মসূচি জোরদার করা হলেও থেমে থাকেনি করোনা। আবারও নতুনভাবে সংক্রমণ ঘটিয়ে চলেছে ভাইরাসটি। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার খবর বিশ্ববাসীকে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরপর এটি অতি সংক্রমণশীল বলে সতর্ক করে সংস্থাটি। ওমিক্রন এখন বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়েছে। এই অতি সংক্রামক ধরনটি সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে ইউরোপের দেশগুলোকে। বিশ্বে করোনা শনাক্তের রেকর্ড এখন আকাশচুম্বী। অতি সংক্রামক করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে কিছু দেশ নববর্ষ উদযাপন আয়োজন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অনেক দেশ এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন নিয়ে। কারণ যতই নতুন বছর শুরুর সময় গড়াচ্ছে ততই করোনা সংক্রমণের খবর আসছে বিশ্বজুড়ে। বলা চলে ওমিক্রনের কারণে ভেসতে যাচেছ নববর্ষ উদযাপন।
টাইমস স্কয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের কেন্দ্রস্থলে ম্যানহাটানে অবস্থিত একটি সড়ক চত্বর। নিউইয়র্ক শহরের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাও এটি। প্রতিবছর এখানে জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপন করা হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি সপ্তাহে করোনা শনাক্তে দৈনিক সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে। করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। ফলে এবারের নববর্ষ উদযাপনে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের অফিসিয়াল ইভেন্টগুলো পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানা গেছে। যদিও সাধারণ মানুষের উপস্থিত থাকার প্রত্যাশা এখনও রয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্বের বিখ্যাত এই স্কোয়ারে মানুষের প্রবেশ সংখ্যা ১৫ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা ভাবছে। অথচ করোনার আগে নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটতো সেখানে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষও সিউলে একই রকম সতর্কতার কথা জানিয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে নতুন বছরের মধ্যরাতে ঘণ্টা বাজানোর আয়োজনে এবার সরাসরি উপস্থিতি থাকছে না সাধারণ মানুষের। নববর্ষ উদযাপনে ভার্চুয়ালি অংশ নিতে পারবেন দর্শকরা। পরে সেটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। তবে বিপরীত দিকে, অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনি একটি আঁতশবাজি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পুরো শহরটিকেই আলোকিত করবে। তবে ওমিক্রন আতঙ্ক থাকলেও সেই প্রদর্শনীতে সমাগম ঘটবে সাধারণ মানুষের, এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। যদিও অস্ট্রেলিয়া সরকার কোভিড-জিরো পলিসি থেকে সরে লিভিং উইথ কোভিড এপ্রোচ গ্রহণ করেছে। টিকাদান কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেখানে। একই সঙ্গে ওমিক্রনের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে দেশটি।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিওতে, কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকতে সাধারণত ৩০ লাখের সমাগম ঘটে যেখানে সেখানেও চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে সর্বপ্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছিল, সেখানেও মধ্যরাত থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ প্রত্যাহার করা হচ্ছে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে। ২০২১ সালে করোনার টিকা আসার ফলে সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিল, এবার হয়ত করোনা বিদায় নেবে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে দেশে দেশে তাণ্ডব চালাচ্ছে ওমিক্রন। বিভিন্ন দেশে আবারও বিধিনিষেধ চালু হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোথাও কোথাও টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো দেশে আবার রাতে কারফিউ চালু হয়েছে। এতদসত্ত্বেও নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সমাগম বাড়বে, আর তাই বার বার সতর্কতার বুলি আওড়াচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সূত্র: আল-জাজিরা