‘অহন তো পথের ফকির হওয়ার দশা হইছে’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘উচ্ছেদের ঘোষণা আগেই পাইছিলাম। কিন্তু ৫০০ বস্তা সিমেন্ট কই নিয়া রাখুম। অন্য গোডাউনেও সিমেন্ট ভর্তি। ব্যাংক থাইক্যা ৩০ লাখ টাকা লোন নিয়া ব্যবসা চালাইতাছি। এই জায়গার মালিকের থেকেও লক্ষাধিক টাকা পামু। গত দুদিন ধইরা তাকে ফোনেও পাইনি। অহন তো আমার পথের ফকির হওয়ার দশা অইছে।’ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের শহীদনগরে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সিমেন্টের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে হতাশার সুরে কথাগুলো বলছিলেন দোকান মালিক আবুল কালাম। কথার ফাঁকে ফাঁকে কর্মচারীদের মাথায় সিমেন্টের বস্তা তুলে দিয়ে দ্রুত দোকান খালি করার তাগাদা দিচ্ছিলেন। কিন্তু দোকানের সিমেন্ট সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা ও উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আধুনিক বুলডোজার ও ক্রেন দিয়ে স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন মালামাল নিয়ে লোকজনকে দ্রুত এদিক-সেদিক দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায়।
লালবাগের শহীদনগর সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আজ বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে। দুপুর ১টা পর্যন্ত ছোটবড় মোট ছয়টি স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গত কয়েকদিন যাবত এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিয়ের কর্মকর্তারা জানান। কিন্তু অনেকেই তা আমলে নেননি। ফলে গতকাল ও আজ উভয় দিনেই বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাটের মালামাল সম্পুর্ণরুপে সরিয়ে নিতে পারেননি। ইমিটেশনের সামগ্রী প্রস্তুতকারক হাসান জানান, উচ্ছেদের নোটিশ পেলেও মালিক তাদের এই বলে আশ্বস্ত করেছে যে তাদের দোকান ভাঙা পড়বে না। কিন্তু আজ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার সময় মালিককে খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে কেউ কেউ আবার আগে থেকেই মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। লোহার ডাইস প্রস্তুতকারক তবারক আলী বলেন, ভারি ভারি যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়া সহজ কাজ নয়। ম্যাজিস্ট্রেট দোকান থেকে ভারি যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে ঘণ্টাখানেক সময় দিলেও যন্ত্রপাতি সবগুলো সরিয়ে নিতে পারেননি। বুলডোজার দিয়ে স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ায় তা ভাঙা স্থাপনার নিচে চাপা পড়েছে বলে জানান। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, যেসব অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে তার পাশেই লালবাগ থানা। থানার অদূরেই অবৈধ এ স্থাপনা বছরের পর বছর বেদখল করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই অবৈধ স্থাপনাকে সাতপুরুষে কেনা সম্পত্তি বলে দাবি করেন। তবে অনেকেই এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন।