চৌগাছা সরকারী খাদ্যগুদামে এবছর ধান চাল সংগ্রহের লক্ষামাত্রা অর্জিত না হওয়ার শংকা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছা সরকারী খাদ্যগুদামে চলতি মৌসুমে আমন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা পুরোন না হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে। ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনের প্রায় মাস পার হতে যাচ্ছে কিন্তু কিছু চাল সংগ্রহ হলেও ধান সংগ্রহ তুলনা মূলক খুবই কম বলে জানা গেছে। গুদাম কর্তৃপক্ষ বলছেন একটানা বৃষ্টিতে কৃষকের ধান মাঠে ভিজে একাকার হয়ে গেছে, যার করনে গুদামে ধান আসতে বিলম্ব হচ্ছে, তবে কৃষক বলছেন উল্টো কথা। শেষমেষ লক্ষমাত্র অর্জন হবে বলে মনে করছেন গুদাম কর্তৃপক্ষ।
চলতি মাসের ১ তারিখে চৌগাছায় সরকারি খাদ্যগুদামের জন্য অভ্যন্তরীণ আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এবছর উপজেলায় ৯৪০ মেট্রিকটন ধান ও ৭৯৩ মেট্রিকটন চাল ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়। উদ্বোধনের দিন কিছু ধান ও চাল সংগ্রহ করা হলেও এ পর্যন্ত কোন ধান নিয়ে কৃষক খাদ্যগুদামে আসেননি। দু’একজন মিলার বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু চাল দিলেও ধান দেয়ার সংখ্যা নেই বললেই চলে। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যহত থাকলে চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ লক্ষমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভবনই বেশি বলে মনে করছেন অনেকে। তবে গুদাম কর্তৃপক্ষ মনে করছেন শেষমেশ তাদের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে। গুদামে ধান আসার সংখ্যা খুবই কম এর অন্যতম কারণ হচ্ছে একটানা বৃষ্টিতে কাটা ধান মাঠে পানিতে তলিয়ে যাওয়া। বৃষ্টি থামার পর কৃষক ওই ধান বাড়িতে আনতে এখন ব্যস্ত। যে সব কৃষক বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু ধান নিয়ে আসছেন তা ভিজে থাকায় কেনা হচ্ছেনা। কৃষককে ধান ভাল ভাবে শুকিয়ে নিয়ে আসার জন্য বলা হচ্ছে। তবে চাষিরা বলছেন ভিন্ন কথা। একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাদ্যগুদাম ধানের যে দর দিচ্ছেন, তার থেকে বাজারে ধানের দাম বেশি। বর্তমানে গুদামে সরকারী ভাবে ১ মণ ধান নিচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকায়। ধান রোদে শুকিয়ে তাপমাত্রা যন্ত্রে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে উপযুক্ত হলেই কেবল নেয়া হচ্ছে। একটু নরম (ভিজে) ধান হলে তা ফেরত দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই না একজন কৃষককে বাড়ি হতে ৫ মণ ধান নিয়ে গুদামে পৌছাতে একটি খরচ আছে যা ওই কৃষকের পকেট থেকেই যাচ্ছে। অথচ যে ধান গুদাম কর্তৃপক্ষ ফেরত দিচ্ছেন তার চেয়েও নরম ধান বাড়ি থেকে ১১শ থেকে সাড়ে ১১শ টাকা মন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যার কারনে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনিহা প্রকাশ করছেন।
খাদ্যগুদামে ধান দিতে আসা চৌগাছা পৌর এলাকার কুঠিপাড়া মহল্লার সফল চাষি হচেন আলী বলেন, আমি প্রতি বছরই গুদামে ধান দিয়ে থাকি। এবছরও উদ্বোধনের দিন তিনি কিছু ধান গুদামে বিক্রি করেছি। এরপর একটানা বৃষ্টি সমুদয় ধান মাঠে পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি থামার পর মাঠ থেকে ধান বাড়িতে এনে রোদে শুকানোর পর গুদামে দেয়ার জন্য আনা হয়। সেখানে তাপমাত্রা মেশিনে মাপার পর নরম হওয়ায় পুনরায় রোদে শুকিয়ে আনার পরামর্শ দেন। ওই ধান বাড়িতে পুনরায় শুকিয়ে তিনি পরবর্তীতে গুদামে বিক্রি করেছেন। ধানের পাশাপাশি এবছর গুদামে চাল আসার পরিমানও বহুলাংশে কম বলে জানা গেছে।
উপজেলার পুড়াপাড়া বাজারের মিলার আব্দুল আলিম জানান, আমন মৌসুমে বেশ আগে ভাগেই মিলে ধান চলে আসে। এবছর বৃষ্টির কারনে ধান আসতে বিলম্ব হচ্ছে। দেরিতে হলেও ধান আসবে এবং কাংখিত চাল তৈরী সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করছেন। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) পলাশ আহমেদ বলেন, ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পরপরই একটানা বৃষ্টিতে কৃষকের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ধান ভিজে যাওয়ায় গুদামে ধান আসতে কিছু বিলম্ব হচ্ছে। ফের্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত যেহেতু সময় আছে এই সময়ের মধ্যে লক্ষমাত্রা অর্জন হবে বলে তিনি আশা করছেন।