মুরাদের বিরুদ্ধে ৪ বিভাগে মামলার আবেদন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ও বিদ্বেষমূলক’ মন্তব্য করার অভিযোগে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে চার বিভাগের সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে বাদীদের বক্তব্য শুনে আদালত ১৫ ডিসেম্বর আদেশের দিন রেখেছে। সেদিনই জানা যাবে মামলাগুলো গ্রহণ করা হবে কি না। আর ঢাকা ও রাজশাহীর দুই মামলায় আজ সোমবার বাদীর জবানবন্দি শুনবে আদালত। সবগুলো মামলার আর্জিতেই জামালপুরের এমপি মুরাদ হাসানের পাশাপাশি মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ নামে আরেকজনকে আসামি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে নাহিদের ফেইসবুকে পেইজে প্রচারিত এক ভিডিও সাক্ষাৎকারেই খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে ‘ওই আপত্তিকর মন্তব্য’ করেছিলেন মুরাদ। ওই মন্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সম্প্রতি একজন চিত্রনায়িকাকে টেলিফোনে অশালীন মন্তব্য এবং হুমকি দেওয়ার অডিও ফাঁস হলে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে মুরাদ হাসনকে বাদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও তাকে সরানো হয়।
ঢাকা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ও ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী রোববার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “আজকে মামলা ফাইলিং হয়েছে। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় আগামীকাল শুনানি হতে পারে।” মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, আসামিরা ফেসবুক লাইভে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খালেদা জিয়ার নাতনি ও তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে ‘অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নারীবিদ্বেষী এবং যে কোনো নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ভাষা’ ব্যবহার করেছেন।
রাজশাহী
বগুড়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম রোববার সকালে রাজশাহীর বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী বলেন, “সম্প্রতি সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপার্সনের নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন। আমার মক্কেল সাইফুল ইসলাম মামলার আবেদন করেছেন। আদালত আবেদন গ্রহণ কাল শুনানির দিন দিয়েছেন।” রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা হলেন, “বিচারক জিয়াউর রহমান ছুটিতে আছেন। তবে মামলার আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামীকাল সোমবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন। শুনানির পর মামলা রেকর্ড করে তদন্ত করা হবে কি না তার আদেশ দেবেন বিচারক।”
চট্টগ্রাম
বিএনপিপন্থি আইনজীবী বদরুল আনোয়ার রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মুরাদ হাসানসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান, তার কন্যা জাইমা রহমানসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে তারা সম্মানহানি করেছেন।” ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩০ ও ৩১ ধারায় এ মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শুনানি নিয়ে আদালত ১৫ ডিসেম্বর আদেশের জন্য রেখেছে।”
সিলেট
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানভীর আক্তার খান রোববার বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মুরাদসহ দুইজনকে আসামি করে মামলার আবেদন করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, “মামলার অপর আসামি নাহিদের ফেইসবুক পেইজ থেকে তারই উপস্থাপনায় গত ১ ডিসেম্বর লাইভে এসে জাইমা রহমানকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন ডা. মুরাদ।” ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারায় এ মামলার আবেদন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আগামী ১৫ ডিসেম্বর আদেশের তারিখ রেখেছেন। আমরা আশা করছি, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন।” মামলার বাদী তানভীর আক্তার খান বলেন, “এই মুরাদ হাসান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্নভাবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। সর্বশেষ তিনি জাইমা রহমান সম্পর্কে যে ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন, সেটা প্রকাশ করতে আমরা নিজেরাই লজ্জিত হচ্ছি। আমরা মনে করি, তাকে গ্রেফতার করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা উচিত।”