এক বছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৪৬ হাজার কোটি টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার এক বছরে নিট ঋণ নিয়েছে ৪৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। ট্রেজারি বিল, বন্ড, স্পেশাল ট্রেজারি বন্ডস ও ইনভেস্টমেন্ট সুকুক ব্যবহার করে এ ঋণ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে ঘাটতি মেটানোর উৎস হিসেবে ব্যাংক খাত থেকে ধার নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সামপ্রতিক সময়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ব্যবহার করে সরকার ঋণ নিচ্ছে।
জানা গেছে, করোনাকালে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা কম ছিল। এ সময় অতিরিক্ত তারল্য দুই থেকে তিন শতাংশ কাটঅফ রেটে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে এ খাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ব্যাংকাররা। আবার সরকারও দীর্ঘমেয়াদি উৎস হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ব্যবহার করে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৯শে নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার এক বছরে নিট ৪৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার ঋণ নেয়। ট্রেজারি বিল, বন্ড, স্পেশাল ট্রেজারি বন্ডস ও ইনভেস্টমেন্ট সুকুক-এর মধ্যে এ ঋণের প্রায় ৪৪ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার পুরোটাই ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে নিয়েছে সরকার। এছাড়া সুকুক থেকে ৭ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা নেয় সরকার। আবার উত্তোলনকৃত অর্থ থেকে স্পেশাল ট্রেজারি বন্ডের বিপরীতে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ করে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। রাজস্ব আদায়ের হারও সেভাবে বাড়েনি। সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও বার্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে (এডিপি) অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। এ জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। ব্যাংক থেকে যেকোনো পদ্ধতিতেই সহজে ঋণ নেয়া যায় বলেই সরকার এদিকে যাচ্ছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের গত নভেম্বর পর্যন্ত নতুন ঋণ নেয়া ও পুরনোর সুদ-আসল পরিশোধ শেষে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৭২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ব্যাংকাররা বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ দিলে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার করোনাকালে ঋণ চাহিদা কম ছিল, কিন্তু আমানতকারীদের ঠিকই সুদ দিতে হবে। এজন্য অপেক্ষাকৃত কম সুদ হলেও সরকারের বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। তবে শঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ বর্তমানে সর্বোচ্চ ঋণ সুদহার হচ্ছে ৯ শতাংশ। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে অর্থ আদায় ও খেলাপি হয়ে যাওয়ার বিষয়ে। কিন্তু সরকারি বিনিয়োগে কোনো ঝুঁকি নেই, নিরাপদ বিনিয়োগ। সমস্যা হচ্ছে শুধু দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ দিতে হয়। ট্রেজারিতে বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে তারল্য দুই লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা ছিল কয়েক মাস আগেও। সেখান থেকে নেমে এসেছে দুই লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকায়। এ অর্থের বেশির ভাগই ট্রেজারি বিল ও বন্ডের নামে সরকারের কাছে রয়েছে ঋণ হিসেবে। উদ্বৃত্ত তারল্যের বেশির ভাগই সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের আকারে গেছে। এতে এরই মধ্যে অনেক ব্যাংকেই নগদ অর্থের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।