বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে না

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে বিদেশে পাঠানোর আইনি কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য বিএনপির এমপিরা মানববন্ধন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো না হলে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। একই দাবিতে আজ সারা দেশে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে, এভারকেয়ার হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তাঁকে স্যুপসহ অন্যান্য তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি এখনো ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যেই আছেন। ডা. জাহিদ আরও বলেন, লিভার সিরোসিস শনাক্ত হওয়ার যে খবর মিডিয়ায় এসেছে, তা ভিত্তিহীন। এদিকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবিতে বিএনপি আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও মহানগরীতে সমাবেশ করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আয়োজন করা হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। সেখান থেকেই নতুন করে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার হার্ট, কিডনিসহ অনেক শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তবে তিনি এখন লিভারের সমস্যায় বেশি ভুগছেন। এ ছাড়া তাঁর ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত। হিমোগ্লোবিনের সংকট রয়েছে। রক্তচাপও ওঠানামা করছে। ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক ক্লোজড মনিটরিং করছেন। তাঁর বিভিন্ন প্যারামিটারসগুলো ওঠানামা করছে। সে অনুযায়ী কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নতুন কোনো লক্ষণ দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি তাঁর পাশে রয়েছেন। এর আগে ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও কোনো সাড়া মিলছে না। এ অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে দলীয় চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে শনিবার সকাল থেকে ৭ ঘণ্টার গণঅনশন করেছে বিএনপি। সেখান থেকেই দেশব্যাপী আজকের সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাঁচটি শরিক দলের নেতারা। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে যান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপির) চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, জোটের পক্ষ থেকে নয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজস্ব চিন্তা থেকে তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নিয়ে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিএনপির ঊর্ধ্বতন মহলও বিষয়টি জানে। লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি, মুখেও ব্যাখ্যা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে কথাগুলো শুনেছেন। তিনি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এত বেশি গুরুতর অসুস্থ যে, দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সব ধরনের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, রাজনীতির অতীতের ভুল-ভ্রান্তিকে ভুলে গিয়ে একান্তভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্তস্বরূপ সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন, তিনি অনুমতি দিলে হয় সরকার বন্দোবস্ত করে পাঠাবে বা দল বন্দোবস্ত করে পাঠাবে। এ কাজটি যদি করা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিকতার, উদারতার ও সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আবেদনটি ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন, তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন। কাজেই তাঁকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যায় কি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের একটি আবেদন এখানে নিয়ে এসেছেন। তাদের আবেদন আমি যথাযথভাবে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমি তাদের বলেছি যে, এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটা আবেদন করেছিলেন। সেটাও আমি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন। আমি এটা বলার পর তারা বলেছেন, এটা মানবিক কারণে দেওয়া যায় কি না সেই বিবেচনা করার জন্য পত্র আমার কাছে দিয়েছেন।
অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা। জাতীয় সংসদ ভবনের বাইরে বিএনপির পাঁচ এমপি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানান। জাতীয় সংসদ ভবনের বাইরে দক্ষিণ প্লাজায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-২ আসনের জি এম সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা। এ সময় জি এম সিরাজ বলেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসকরা বলছেন, তাঁকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। দলের তরফ থেকে বারবার দাবি জানানো হচ্ছে। সেখানে সরকার তার নিজের মতো চলছে। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে চাই, আপনি আপনার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারণ, আপনাকে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা দেওয়া আছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় গতকাল দুপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে সরকারকে আবারও হুঁশিয়ার করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, আমি সরকারকে আবারও বলছি, এখনো সময় আছে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে যেতে দিন। রিজভী আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার পরিণতি ‘ভয়াবহ হবে’। তখন এই বাংলাদেশে এই সরকার এক মুহূর্তও টিকতে পারবে না। স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীম, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল ইসলাম, ওলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, আনোয়ার মোহাম্মদ শামীম আজাদ, সুলতান মো. নাসির, সাহাবুদ্দিন মুন্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।