রায়ে বিচারিক আদালতের পর্যবেক্ষণ দেওয়ার এখতিয়ার নেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রায়ে বিচারিক আদালতের পর্যবেক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা বা এখতিয়ার নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় দেওয়া পর্যবেক্ষণ নিয়ে রোববার (১৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিচারক তার রায় দিয়েছেন। রায় নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। তিনি রায়ে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যেটাকে আমরা বলি- রায়ের অবজারবেশন বা পর্যবেক্ষণ। সেখানে তিনি বলেছেন, ধর্ষণের পর ৭২ ঘণ্টা যদি পেরিয়ে যায় তাহলে পুলিশ মামলা নিতে পারবে না। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ দেওয়ার এখতিয়ার বিচারিক আদালতের নেই। এ ধরনের কোনো কিছু যদি বলতে হয় সেটা হাইকোর্ট বলতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে যে বিধান আছে, উচ্চ আদালত যদি কোনো রায় দিয়ে থাকেন সবাই সেটা মানতে বাধ্য। কিন্তু লোয়ার কোর্ট ওই মামলায় কোনো কিছু বলতে পারেন না। জেনারেল কোর্ট কোনো অর্ডার এভাবে দিতে পারেন না। সেটা উনি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন এবং তার এ কাজের ফলে আমাদের যে বিচারব্যবস্থা, সেখানে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এসব কারণে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখে নিয়ে আসবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেবেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ব্যবস্থাও নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির এ সিদ্ধান্ত দেশের সব বিচারকদের জন্য বার্তা কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা কিন্তু নতুন না। অনেক সময় হয়তো আপনারা (গণমাধ্যম) জানেন না, ওনারা তদন্ত করে শাস্তি দেন, অনেকক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে এটা যেহেতু মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়েছে, এজন্য আমরা জানি। এটা সবসময় একটা বার্তা। যেকোনো কাজ করতে গেলে অর্থাৎ কোনো বিচারক যদি অন্যায়ভাবে কোনো অর্ডার দেন বা কোনো কিছু করেন সেটা কিন্তু তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখতিয়ারে মধ্যে থেকে যদি কেউ কিছু করেন সেটা ভুল হবে না। আপনাকে এখতিয়ারের মধ্যে থেকে পর্যবেক্ষণ দিলে সেটা ভুল হবে না। লোয়ার কোর্টের রায় তো হাইকোর্টে আসবে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী হবে। সাক্ষী কি বলেছেন, বিশ্লেষণে ঘটনা কি ঘটেছিল, রায়টি প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে হয়েছে কি না দেখা হবে। আপিলের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রায়ের কোনো কিছু পাইনি। পেলে অবশ্যই করবো।
গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত ওই মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে খালাস দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গেছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি’। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায় তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।