অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতি নিয়ে বিপাকে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

0

যবিপ্রবি সংবাদদাতা ॥ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) গত ১৭ অক্টোবর ২০২০ থেকে সকল বিভাগের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। যবিপ্রবি প্রশাসন অনলাইন ক্লাস নেওয়া ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) তৈরি করে । সফটওয়্যারটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই ব্যবহার করছেন না সফটওয়্যারটি, রয়েছে নানা রকম অভিযোগ ও সমস্যা। অন্যদিকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড পাচ্ছে না অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উপস্থিতির নম্বর নিয়ে দুশ্চিন্তায় নেটওয়ার্ক, ডিভাইস ও অন্যান্য জটিলতায় অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে না পারা শিক্ষার্থীরা।
যবিপ্রবি প্রশাসনের নিজস্ব এলএমএস সফটওয়্যারটি মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও অনলাইন ক্লাসের নানা রকম জটিলতার বিষয় বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছিল। সফটওয়্যারটিতে অনলাইনে নেওয়া প্রতিটি ক্লাসের রেকর্ডিং ভিডিও ধারণসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করার অপশন রয়েছে। তাছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির সংখ্যা সেখান থেকে জানা যাবে। যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারে এবং পরবর্তী সময়ে রেকর্ড ক্লাসের ভিডিও দেখে তাহলে সেখান থেকে উপস্থিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ হয়ে যাবে এই সিস্টেমে।
কিন্তু এতসব সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও অধিকাংশ বিভাগে ব্যবহার করা হচ্ছে না সফটওয়্যারটি, রয়েছে ব্যবহারিক নানা জটিলতা। এমনও অনেক বিভাগ আছে যেখানে একদিনও ব্যবহার করা হয়নি সফটওয়্যারটি। সফটওয়্যার ব্যবহারে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হয়ে বিকল্প হিসেবে অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জুম আপস ব্যবহার করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেকর্ডিং ভিডিও এলএমএসে আপলোড করার কথা থাকলেও সিংহভাগ শিক্ষকই সেটা করছেন না। অনেকে আবার ধারণ করেননি ক্লাস রেকর্ড। এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনলাইনে যুক্ত হতে না পারা শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর বাড়ি গ্রাম অঞ্চলে। যেখানে আমরা নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য ঠিকমত ফোনে কথা বলতে পারি না, সেখানে আমাদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়া কতোটা কঠিন সেটা বলার অবকাশ রাখে না । আমাদের উপাচার্য স্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন অনলাইন ক্লাস শেষে শিক্ষকগণ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্লাসের রেকর্ডিং এলএমএসে আপলোড করে দিবেন কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই সেটা করেননি। অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির জন্য নম্বর না থাকলেও আমাদের যবিপ্রবিতে উপস্থিতির জন্য ৮ নম্বর রয়েছে। এখন আমরা যারা ক্লাসে উপস্থিত হতে পারিনি তারা কিভাবে উপস্থিতির নম্বর পাব? যেখানে শিক্ষকগণ নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য প্রায়শই ঠিক করে ক্লাস নিতে পারেনি সেখানে আমাদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির জন্য নম্বর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আমরা চাই সবাইকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির সম্পূর্ণ নম্বর দেওয়া হোক। সেই সাথে ক্লাস রেকর্ডিংগুলো এলএমএসে আপলোড করা হোক। সার্বিক বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন , অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে শিক্ষকদের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) তৈরি করে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রত্যেকটি বিভাগের সকল শিক্ষকদের এই সিস্টেম চালানোর জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখন কোন শিক্ষক যদি এলএমএসে ক্লাস না নেয় এবং তারা অনলাইন ক্লাসের রেকর্ডিং শিক্ষার্থীদের কোন মাধ্যমে প্রদান না করে থাকেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করা হবে । কোন বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি এমন কোন অভিযোগ আসে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। তিনি আরও বলেন, সামনে আমরা এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে তুলব। ২০২২ সাল থেকে সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসগুলো ডিজিটাল ক্লাস রুমের মাধ্যমে নেওয়া হবে। যেখানে কোন শিক্ষার্থী ইচ্ছে করলেই ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে এবং প্রতিটা ক্লাসের রেকর্ডিং আমাদের এলএমএসে আপলোড করা হবে। কিন্তু সকল শিক্ষককে ক্লাস রুমে এসেই ক্লাস নিতে হবে। আমরা সামনের বছর থেকে অনলাইনে ক্লাস ও রেকর্ডিং আপলোডের বিষয়গুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখব।