নির্লিপ্ত নিশামের চোখ বলেছে অনেক কথা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘বাচ্চারা তোমরা খেলাধুলায় এসো না। বেকিং বা অন্য কিছু করো। মোটা ও সুখী থেকে ৬০ বছর বয়সে মারা যেও।’, ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে সুপার ওভারে হারে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থেকে এই কথা বলেছিলেন জিমি নিশাম। খেলাধুলা যে কষ্টও বাড়ায়, সেটাই হয়তো বোঝাতে চেয়েছিলেন নিউ জিল্যান্ড অলরাউন্ডার। দুই বছরেরও বেশি সময় পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল। বুধবার আবু ধাবিতে সেই দলকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করল নিউ জিল্যান্ড। হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ হওয়ার কথা নিশামের। প্রতিশোধ যে নেওয়া হয়ে গেল। কিন্তু না, ড্যারিল মিচেল ১৯তম ওভারে জয়সূচক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যখন উদযাপন করছেন, ডাগআউটে সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হৈ-হুল্লোড়ে মত্ত, তখন কি না চেয়ারে ঠাঁই বসে আছেন নিশাম। একটুও নড়চড় নেই। শুধু তাই নয়, দুই হাত বুকে ভাঁজ করে রেখেছেন। পায়ের উপর পা তুলে। আরেকজনও চেয়ার ছেড়ে ওঠেননি। তিনি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তার মুখে ছিল চওড়া হাসি। নিশামের মুখে তাও নেই। নির্লিপ্ত চোখ, যা বলেছে অনেক কথা। এখানেই শেষ নয়। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর নিউ জিল্যান্ড খেলোয়াড়রা যখন ড্রেসিংরুমে, আরো উদযাপন করছেন। তখনও একা চেয়ারে বসা নিশাম। কী এমন হলো? দলকে না জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার আক্ষেপ নাকি ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্নায়ুচাপ মোকাবিলা করে দলের পাওয়া এই জয়ে?
নিউ জিল্যান্ড অলরাউন্ডারের এই ছবি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। সবার মনোযোগ ছিল ওই ছবির ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় নিশাম বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখেননি। ক্রিকইনফোর পোস্ট করা ছবি রিটুইট করে লিখেছেন, ‘কাজ শেষ? আমি তা মনে করি না।’ বোঝা গেল ২০১৯ বিশ্বকাপের যন্ত্রণা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় নিশামকে। যা লাঘব করতে চান কেবল ট্রফি জিতেই।
এক ওভার হাতে রেখে নিউ জিল্যান্ড ৫ উইকেটে জিতেছে। পেয়েছে ১৪ নভেম্বর দুবাইয়ে হতে যাওয়া ফাইনালের টিকিট, যা পেতে সবচেয়ে বড় অবদান মিচেলের। ৪৭ বলে ৭২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো অংশে কম অবদান নয় নিশামের। ১৬তম ওভারে গ্লেন ফিলিপস আউট হলে ক্রিজে আসেন নিশাম। নিজের খেলা তৃতীয় বলেই আদিল রশিদকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকান। তারপর তৃতীয় বলে বাউন্ডারি ও চতুর্থ বলে ছক্কা, যেটি লং অনের বাউন্ডারিতে জনি বেয়ারস্টো ক্যাচ ধরেছিলেন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু বল ধরে তা সতীর্থ ফিল্ডারকে দেওয়ার আগে বাউন্ডারিতে পা পড়েছিল বেয়ারস্টোর। দুই বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালে বোল্টের সেই স্মৃতিই যেন ফিরে এলো আবু ধাবিতে। ১৮তম ওভারের শেষ বলে আরেকটি বাউন্ডারি মারতে গিয়ে কভারে সরাসরি মর্গ্যানের ক্যাচ হলেন নিশাম। তার আগে একই ওভারে রশিদকে মেরেছিলেন নিজের তৃতীয় ছক্কা। ১১ বলে ২৭ রান করে মিচেলের ঘাড় থেকে চাপ নামিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে চাননি তা বোঝা যাচ্ছিল মাঠ ছাড়ার সময় অঙ্গভঙ্গি থেকে। যে আক্ষেপ ম্যাচ শেষে উধাও হলেও উদযাপন জমিয়ে রাখলেন ফাইনাল পর্যন্ত। ট্রফি হাতে নিয়ে হয়তো উদযাপনের জোয়ারে ভাসবেন, সেটা হবে তো!