মনিরামপুর মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ঘুষ দিয়ে চাকরি না পেয়ে সভাপতিকে জুতাপেটা এক নারীর

0

স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর)॥ যশোরের মনিরামপুরে মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকুরির জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ছয়লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকুরি পাননি কুলসুম বেগম। অভিযোগ রয়েছে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোশাররফ হোসেনকে জুতাপেটা করেন তিনি। শুধু লাঞ্ছিত অথবা জুতাপেটা করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি তিনি। শনিবার বিকেলে স্কুল মাঠে আয়োজন করেন বিক্ষোভ সমাবেশের। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে কুলসুম বেগম ছাড়াও এলাকাবাসী সভাপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতর ফিরিস্তি তুলে ধরে বিচার দাবি করেন। তবে সভাপতি বলেন, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে কুৎসা রটাচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া, দপ্তরিসহ মোট চারজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী আয়া পদে কুলসুম বেগমসহ পাঁচজন এবং অন্যান্য পদে মোট ১৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনপত্র যাচাবাছাই শেষে নিয়োগ বোর্ডে অংশ নিতে সবাইকে চিঠি প্রদান করা হয়। কুলসুম বেগমের অভিযোগ তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ছয়মাস আগে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক দুই দফায় ঘুষ বাবদ তার কাছ থেকে মোট ছয়লাখ টাকা গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় নিয়োগ বোর্ডের। কুলসুম বেগম জানান, নিয়োগ বোর্ডের আগের রাতে সভাপতি সিরাজুল ইসলাম তাকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও সরবরাহ করেন। বৃহস্পতিবার কুলসুম বেগমসহ সব প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু চার পদের মধ্যে আয়া পদে কুলসুম বেগমকে চাকুরি দেওয়া হয়নি। তার অভিযোগ ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে আয়া পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বর আসমা খাতুনকে। যদিও আসমা খাতুন চাকরি পাওয়ার পর ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে আয়াপদে চাকুরি না পেয়ে কুলসুম বেগম শুক্রবার সকালে মনোহরপুর কাঁচারীবাড়ি বাজারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের কাছে ঘুষের ছয় লাখ টাকা ফেরত চান। প্রত্যক্ষদর্শী আবদুস সাত্তারসহ অনেকেই জানান, সিরাজুল ইসলাম টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করলে দুজনের মধ্যে ব্যাপক কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কুলসুম বেগম সিরাজুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করাসহ জুতাপেটা করেন। এ দৃশ্য উপস্থিত সকলেই প্রত্যক্ষ করলেও সিরাজুল ইসলামকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। পক্ষান্তরে ছয়লাখ টাকা ঘুষ নিয়েও চাকুরি অথবা টাকা ফেরত না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে কুলসুম বেগমের আহবানে গতকাল শনিবার বিকেলে স্কুলে মাঠে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্থি তুলে ধরে বিচারের দাবিতে বক্তব্য রাখেন কুলসুম বেগম ও তার স্বামী আবদুল ওয়াদুদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কালিপদ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সিদ্দিকুর রহমান, অভিভাবক সদস্য ওয়াজেদ আলী সরদার, আলী আযম বাচ্চু, আবদুস সাত্তার প্রমুখ। সভায় বক্তরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের নামে প্রায় অর্থকোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন। তবে ছয়লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, সমাজে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তার দলের প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার জানান, চাকরি দেওয়ার জন্য ঘুষ নেওয়া হয়েছে কি না তা তার জানানেই। তিনি জানান, এ ব্যাপারে সভাপতি ভাল বলতে পারবেন।