যশোর জেলা বিএনপির স্মরণসভায় সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান টুকু ঐক্যবদ্ধ হোন, তরিকুল ইসলামের দেখানো পথে অচিরেই বিজয় আসবে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন তরিকুল ইসলামের জন্য কোনো বিশেষণ যথার্থ নয়। তিনি ছিলেন সাচ্চা দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী উদার গণতান্ত্রিক মানুষ, আপামর গণমানুষের জাতীয় নেতা। দলের জন্য, কর্মীর জন্য, নেতার জন্য, শুধু দল নয়, দেশের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তার মতো ত্যাগী নেতা দেশে বিরল। তিনি বলেন, আজকের এই ক্রান্তিকালে তার নেতৃত্বের অভাব শুধু আমরা নই গোটা জাতি অনুভব করছে। স্বৈরশাসকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে বারবার নির্যাতিত ও কারবাসী হয়েও তিনি কখনই আদর্শচ্যুত হননি। জনাব টুকু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তরিকুল ইসলামের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, তাঁর মতো অসম্প্রদায়িক নেতা আর দেখা হয়নি। তিনি বলেন, দেশে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করে আওয়ামী লীগ একাই প্রতিবাদ করছে আর বিএনপিকে গালি দিচ্ছে। দুর্ভাগ্য তাদের এবার হিন্দু সম্প্রদায় সত্য নিশ্চিত হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেয়নি। বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অভয় দিয়ে তিনি বলেন, হতাশার কোনো কারণ নেই, সময় নিজেই তৈরি হচ্ছে, সকল অত্যাচার, হত্যা গুমের অবসান হবে। আপনার ঐক্যবদ্ধ হন সামনেই কঠিন কর্মসূচি আসছে। সকল কর্মসূচি সফল করে সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। তরিকুল ইসলাম স্মরণে যশোর জেলা বিএনপির চারদিনব্যাপী কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. জাফর সাদিকের সভাপতিত্বে বিডিহলে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ইকবাল হাসান মাহমুদ আরও বলেন, তরিকুল ইসলাম ছাত্র জীবন থেকে আমৃত্যু মানুষের জন্যে যুদ্ধ করে গেছেন। বাঙালির নিজস্ব সাংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদের প্রতি শুধু অনুগত ছিলেন না, এটি করে রাখতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি মানুষের জন্মগত অধিকার আদায়ের জন্যে এবং গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের জন্যে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। যে কারণে তাকে বরাবরই নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। বার বার কারাবরণ করতে হয়েছে। তারপরও তিনি যেমন হতাশ হননি, দলের নেতাকর্মীদেরও হতাশ করেননি। দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে থেকে তিনি নেতাকর্মীদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন। কারাবন্দী থেকেও নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিতেন। তরিকুল ইসলামের জীবন কোনদিনই মসৃণ কিংবা সমান্তরাল ছিল না। মানুষের অধিকার আদায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও তিনি আপস করেননি। ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ইতিহাস সত্য কথা বলেন। ইতিহাস চুপ করে থাকে না, ইতিহাসে কারও বানানো কথা বলে না। ইতিহাস ইতিহাসের কথা বলে। যদি ও আমাদের দেশের সঠিক ইতিহাস হাইজ্যাক হয়ে গেছে। তারপরও সত্য ইতিহাস একদিন উঠে আসবে। সেদিন ইতিহাস বলবে, তরিকুল ইসলামের অবদানের কথা। তিনি ছিলেন, বটবৃক্ষের ছায়ায় মতো। তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই পথে অন্ধকার ঘুচিয়ে অচিরেই আলো আসবে। আমরা তার আদর্শ বুকে ধারণ করে সে পথেই চলব। তিনি বলেন, বিএনপির শাসন আমলে কোন হিন্দুরা বাড়ি ঘর ও পূজামন্ডপে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এক সাথে রোজা ও দূর্গাপুজা উদযাপিত হয়েছে। বিএনপির আমলে বারবি মসজিদ ভাঙচুর হয়েছে। তখন কোন হিন্দু বাড়ি ঘর মন্দিরে ভাঙচুর হয়নি। বিএনপি বরাবরই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। আর আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে তারাই সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।
আজ দেশে গণতন্ত্র সামাজিক ন্যায় বিচার সাম্য কোনকিছুই নেই। দিনের ভোট মধ্য রাতে হয়। আবার তারাই বলে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যেতে চাই না। এ কেমন পরিহাস। একদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম দ্বিগুণ, তার ওপর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি কর জনগণকে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। এখন জনগণের বাচার একমাত্র পথ রাজপথ। রাজজপথ প্রকম্পিত করে জনগণকে এই হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচতে হবে। স্মরণ সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ও বাংলার তরুণ সমাজের মধ্যে যারা জাতীয় মুক্তি স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন, তরিকুল ইসলাম তাদের মধ্যে একজন। তিনি এদেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের পক্ষের লোক ছিলেন দেশের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জাতীয় স্বার্থ বিরোধী মানুষদের বরাবরই তিনি বিরোধী করেছেন। যে কারণে তিনি ছাত্র যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ধাপে ধাপে তিনি মাওলানা ভাসানির প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভাবনা নিয়ে নবজাগরণের সৃষ্টি করেছিলেন, সেখানেও তরিকুল ইসলাম অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
আরেক বিশেষ অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমি বলেন, তরিকুল ইসলাম আমার রাজনৈতিক ও পারিবারিক অভিভাবক। তিনি আমার পিতার সাথে রাজনীতি করেছেন। আমি রাজনীতি শিখেছি তার কাছ থেকে। তরিকুল ইসলামের আদর্শ বুকে ধারণ করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, তরিকুল ইসলাম প্রতিবাদী নেতা, রাজনৈতিক ময়দান থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব। দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সংগ্রামী জনগণের আপসহীন নেতা। সৃষ্টিশীল ভাবনা, প্রগতিশীল, রাজনীতি তাকে অনেক উপরে স্থান করে দিয়েছে। সাহসী ভূমিকা সত্য বাচনভঙ্গি, মানুষের প্রত্যাশা পূরণের কণ্ঠস্তর তরিকুল ইসলাম। বিপদে আপদে সংগ্রামে তিনি মানুষের পাথে ছুটে গেছেন। সভায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন, খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনি, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, ফারাজী মতিয়ার রহমান, যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. নজরুল ইসলাম, অ্যাড. মোহাম্মদ ইসহক, আব্দুস সালাম আজাদ, নগর বিএনপির আহ্বায়ক মারুফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নূর-উন-নবী, নগরবিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আজম, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণসম্পাদক আনছারুল হক রানা, নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শামসুন্নাহার পান্না, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।