ফেরি ডুবার কারণ উদ্ঘাটন হোক

0

নদীমাতৃক বাংলাদেশের যাত্রাপথে সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও খরস্রোতা নদীর ওপর দিয়ে চলা নৌযানও যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আধুনিকতার বিস্তৃত বলয়ে নতুন অনেক কিছু উদ্ভাবন অবকাঠামো খাতকে এগিয়ে নিলেও নদী পথের যাত্রাকাল এখনও দূরে আছে বলাই যায়। শুধু দূরে থাকা নয়, ত্রুটিবিচ্যুতিপূর্ণ নৌযান নিয়ে যাত্রী সাধারণের জীবন-মাল ঝুঁকির আবর্তে ফেলে দেয়াও এক অনাকাক্সিক্ষত কার্যক্রম। প্রমত্ত পদ্মার ওপর দিয়ে চলা ত্রুটিপূর্ণ আমানত শাহ্্ ফেরিটি এতদিন চললেও শেষ অবধি রক্ষা পেল না। ডুবে যাওয়ার পর যানগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়। তবে এ সম্পাদকীয় লেকার সময় তিন দিনেও উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়নি।
দুর্ঘটনা কবলিত ফেরিটি চলাচলের কতখানি উপযোগী ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে। এতে যে ইতিবৃত্ত উঠে আসে তাও গাফিলতির চরম দৃষ্টান্ত। প্রায়ই ৪০ থেকে ৪২ বছর আগে ডেনমার্ক থেকে আমদানি করা এই ফেরিটি আশির দশক থেকেই নদী পথে চলাচল শুরু করে। তবে বিধিনিষেধ মতে, ২৫ বছরেই এর সক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। বিআইডব্লিউটিসি সেটিকে কোনভাবেই আমলে নেয়নি। তবে ত্রুটিপূর্ণ ফেরিটি মাঝে মধ্যে মেরামত করার তথ্যও উঠে আসে। মেয়াদ পার হওয়ার ১৬-১৭ বছর ধরে কিভাবে খরস্রোতা নদীর ওপর বহু যন্ত্রযান নিয়েই শুধু নয়, অগণিত মানুষের মূল্যবান জীবনের ঝুঁকি নিয়েও চলাচল করত সেটাই এখন বিস্মিত হওয়ার মতো। তবে স্বস্তির বিষয় ফেরিটি ডুবে যাওয়ায় নৌযান এবং ভারি যন্ত্রযানের ক্ষয়ক্ষতি হলেও মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। তবে তীরে ভেড়ার পরই ফেরিটি ডুবে যায় বলে মানুষের মূল্যবান জীবন বিপন্ন হয়নি। কিন্তু মাঝ পথে যদি ডুবে যেত তাহলে যে কি হতো তা ভাবতেও শঙ্কা জাগে।
এখন ধারণা করা হচ্ছে মেয়াদ পার হওয়ার দীর্ঘ সময় ধরে ফেরিটি আগের মতো ভারি যান নিয়ে নদী পথে আসা-যাওয়ার মোটেই উপযুক্ত ছিল না। ইতোমধ্যে সে তার সক্ষমতা হারিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে নদী পারাপার করত- যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নৌ কর্তৃপক্ষের এটি চরম গাফিলতি। যে কোন যন্ত্রযান তার চলার গতি শুরু করার আগে একবার ত্রুটিবিচ্যুতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা পরিবহনের প্রাসঙ্গিক শর্তের মধ্যেই পড়ে। তেমন দায়বদ্ধতাও বার বার অবহেলিত হয়েছে।
উন্নয়নের অবধারিত যাত্রাপথের আনুষঙ্গিক নিয়ম-শৃঙ্খলা যেমন জরুরী, পাশাপাশি বিধিনিষেধকেও আমলে নেয়া প্রয়োজনীয় শর্তের মধ্যে পড়ে। ত্রুটিপূর্ণ ফেরিগুলো শুধু দায়সারা গোছের মেরামতই করা হয়নি- পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির অভাব ছাড়াও প্রতি পদে উদাসীনতা, গাফিলতি ও সমস্যাকে গভীরে নিয়ে যায়।
এতবড় নৌ দুর্ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। ডুবে যাওয়া ট্রাক ও ক্ষুদ্র যান সব উদ্ধার করতে না পারলেও বেশ কয়েকটি পানি থেকে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে এমন সব অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও পরবর্তী তদন্ত কমিটি দীর্ঘসূত্রতার জালে পড়ে যায়। আইনীভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম এগিয়ে যেতেও পারে না। এমন সব ত্রুটিপূর্ণ সীমাবদ্ধতা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বের হয়ে আসতে হবে। মূল সমস্যাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়াও জরুরী। মূল্যবান জীবন ও সম্পদ রক্ষায় শুধু মেয়াদোত্তীর্ণ নৌযানের চলাচল বন্ধই নয়, চালকের দক্ষতা-অভিজ্ঞতার ওপরও গুরুত্ব দেয়া একান্তই জরুরি।