পাহাড় রক্ষায় আইন কার্যকর হোক

0

আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া পাহাড় কাটা বন্ধ হবে না। একথা আবারো প্রমাণ হয়েছে প্রতিবছর বর্ষা এলে প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা দরিদ্র লোকজনকে সরে যেতে বলে। পাহাড় কাটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে। বিদ্যমান আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করা হয়। বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। সেসব তদন্ত কমিটি নানা ধরনের সুপারিশও করে। কিন্তু কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন জরিমানা করেও পাহাড় কাটা থামাতে পারেনি। কাটা হচ্ছে পাহাড়। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে গ্রামবাসী অভিযোগ দিলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে এক্সকাভেটর ও ট্রাক জব্দ করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা দিয়ে মুক্ত হয়ে অভিযুক্তরা গত সোমবার সকাল থেকে আবার ৩৫টি ট্রাক দিয়ে পাহাড় কাটা শুরু করেছেন।
এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে প্রায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। ২০১৭ সালে পাহাড়ধসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে এক দিনেই মারা গিয়েছিল ১৪২ জন। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে মাটিচাপায় মারা গিয়েছিলেন পাঁচ সেনাসদস্যও। এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছিল ১২৭ জনের। এভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিবছরই। পরিবেশবিদরা এ জন্য নির্বিচারে পাহাড় কাটাকেই দায়ী করছেন। দেশের প্রচলিত আইনেও পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রতিদিনই পাহাড় কাটা হচ্ছে। পরিবেশবিদদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কোনোটাই কাটা যাবে না। জাতীয় প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় কাটার যে বিধান রয়েছে তারও অপব্যবহার হচ্ছে। দেখা যায়, এসব কাজে নিয়োজিত ঠিকাদাররা প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করেন। শুধু পাহাড় কাটা নয়, দেদার পাহাড়ের গাছও কাটা হচ্ছে। আর কাটা গাছের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। অথচ, আইনে পাহাড় বা টিলার মাটি ব্যবহার বা কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রায় কেউই মানছে না এসব আইন। পাহাড় কাটার ফলে শুধু দুর্ঘটনাই ঘটে তা নয়, দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর শুধু যে পাহাড় কাটা হচ্ছে তা নয়। পাহাড়ের প্রকৃতিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ের বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের অনেক প্রাণীই সমতলে এসে টিকে থাকতে পারে না। আবার এটাও সত্য যে কোনো কিছুই বিকল্পহীন নয়। কিন্তু তারও একটা নিয়ম থাকা দরকার। আমাদের দেশে নিয়ম মানতে অনেকেই নারাজ। কিন্তু এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। তাই, আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।