কেন দাম বাড়ছে ভোজ্য তেলের

0

আলতাফ হোসাইন॥ বছরজুড়েই ভোজ্য তেলের দাম চড়া। দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে দ্বিগুণ। এরমধ্যেই আবারও নতুন করে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে মিল মালিকরা। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে মিল মালিকরা দেশের বাজারে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আরও ৭ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রস্তাব অনুমোদন দিলে ভোজ্য তেলের দাম আরেক দফা বাড়বে। এমনিতেই দেলের বাজার অস্থির। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।
এ অবস্থায় নতুন করে মূল্য বৃদ্ধি করাকে অমানবিক বলছেন ভোক্তারা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, এমনিতেই বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম চড়া। তেলের দামও কয়েক মাস ধরে নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় দাম আরও বাড়ানো হলে অসহনীয় ভোগান্তির মুখে পড়বে নিম্ন্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা। গত রোববার ব্যবসায়ীরা এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা করার প্রস্তাব দেয়, সয়াবিন তেল পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। তাদের প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ করে ট্যারিফ কমিশন বোতলজাত প্রতি লিটার তেলের মূল্য ১৬২ টাকা করার সুপারিশ করে। তবে গত রোববার ওই বৈঠকে আলোচনা করে প্রতিলিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৫৩ টাকা। জানা যায়, বৈঠকে খোলা সয়াবিন তেলের দামই প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা করার প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বোতলজাত ৫ লিটারের দাম ৭৬০ টাকা, যা বর্তমানে ৬৬৮ থেকে ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাম অয়েল প্রতিলিটার ১১৯ টাকা করার প্রস্তাব দেন মিল মালিকরা।
সভায় জানানো হয়, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেলের নির্ধারিত দাম হচ্ছে প্রতি লিটার ১২৯ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৭২৮ টাকা ও পাম তেল প্রতিলিটার ১১৬ টাকা। তবে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আগের নির্ধারিত মূল্য তালিকাও মানা হচ্ছে না। খোলা সয়াবিন তেলের নির্ধারিত দাম ১২৯ টাকা বলা হলেও দোকানে তা ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম তেলের দাম ১১৬ টাকা বলা হলেও বাজারে তা ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এমন দামেই ভোক্তাদের ক্ষোভের শেষ নেই। এ অবস্থায় দাম আরও বাড়ানোর প্রস্তাবে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র প্রতিদিনের বাজারদরের তথ্যে দেখা যায়, গতকাল খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক মাস আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাসে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। একই মানের তেল গত বছর বিক্রি হয়েছে লিটারে ৯০ থেকে ৯৩ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকাল সয়াবিনের ১ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। একই তেল গত বছর ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা লিটারে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পাম তেল মান ভেদে গতকাল বিক্রি হয়েছে লিটারে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায়। যা গত মাসে ছিল ১২০ থেকে ১৩০। অর্থাৎ মাসে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৯২ থেকে ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ পর্যন্ত। একই মানের তেল গত বছর ছিল ৭৮ থেকে ৮৮ টাকা লিটারে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫৪ দশমিক ০৭ থেকে ৫৭ দশমিক ৪১ শতাংশ পর্যন্ত। গত বছর সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ৪৭০ থেকে ৫২০ টাকা। সেই তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬৮ থেকে ৭২০ টাকায়। অর্থাৎ বছরে বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ।