বিরোধী দলহীন সংসদীয় ব্যবস্থা সফল হয় না

0

সালাহউদ্দিন বাবর
(গতকালের পর)
এ কথা বহুল প্রচলিত যে, সংসদীয় শাসনব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকার পর, কিভাবে এই পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা বেশি গণতান্ত্রিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক হতে পারে! এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫(৩) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকিবেন।’ এর সহজ অর্থ প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী সংসদের কাছে তথা সংসদ সদস্যদের কাছে তাদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন নিয়ে জবাবদিহি করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। কোন প্রক্রিয়ায় এই বাধ্যবাধকতা কার্যকর হবে- সেটিও সংবিধানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সংবিধানের ৭৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির কথা। সেই বিধিতে পরিষ্কার করা হয়েছে, কোন প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালন নিয়ে সংসদ সদস্যদের তারা জবাবদিহি করবেন। এ ক্ষেত্রে যাবতীয় পথ পদ্ধতি সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে। উল্লেখ্য, এই বিধির সাংবিধানিক মর্যাদা রয়েছে। যেমন এমপিগণ মন্ত্রীদের কাজে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা, বিভিন্ন বিষয় প্রস্তাবাকারে সংসদে উত্থাপন করে মন্ত্রীদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের সমস্যা সঙ্কট ও নানা ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া। নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান, মন্ত্রীদের কাছে, তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পদ্ধতি বর্ণিত রয়েছে। কার্যপ্রণালী বিধি ছাড়াও সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদীয় কমিটি গঠনের ব্যবস্থার কথা বলা আছে। এসব কমিটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কমিটির বৈঠকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের কাছে মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং ওয়াকিবহাল হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশের সংসদে সরকারি দলের যে ব্রæট মেজোরিটি এখন রয়েছে, তাতে সরকারের দায়িত্ব পালন নিয়ে জবাবদিহি করার অবস্থা কোথায়? কথায় বলে, ‘কাকের গোশত কাকে খায় না।’ তেমনি সরকারি দলের সদস্যরা নিজ দলের মন্ত্রীদের কিভাবে তাদের কাজের কৈফিয়ত তলব বা খোলামেলা প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করবে, যা বর্তমান সংসদে কখনোই পরিলক্ষিত হয়নি। সংসদীয় শাসনব্যবস্থাকে অধিতর জবাবদিহিমূলক তথা সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের কাজের খোঁজখবর নেয়া তথা সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর প্রাণবন্ত ও অর্থপূর্ণ করতে হলে অবশ্যই সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি একান্ত অপরিহার্য। পৃথিবীর যেসব দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা বহাল রয়েছে, সেখানে পার্লামেন্ট, লোকসভা, কওমি অ্যাসেম্বলি বা রাষ্ট্রীয় সভা যা-ই বলি না কেন, সেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের তটস্থ করে রাখে। মন্ত্রীদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যদি কখনো পান থেকে চুন খসে তবে লঙ্কাকাণ্ড বেধে যায়। কিন্তু আমাদের এমন কিছু হয় না। আগেই বলা হয়েছে একদলীয় সংসদে এমন কিছু ঘটার কোনো কারণ নেই। আমাদের সংসদে তো প্রকৃত কোনো বিরোধী দল নেই। আর না থাকার কারণ একাদশ সংসদ নির্বাচনে যত অনিয়মের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাতে কেবল একটি দল তথা ক্ষমতাসীনরাই সংসদে যেতে পেরেছে।
সাম্প্রতিককালে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়, তাতে ক্ষমতা আর কর্তৃত্ব দোল খায়। তথা ক্ষমতাসীনদের অভিলাষের ওপরই নির্বাচনের স্বরূপ নির্ভর করে। একাদশ সংসদে যা ঘটেছে তা উল্লেখ করতে চাই না। কেননা সে ঘটনা এখনো মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। আগামীতে ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন প্রথম কোয়ার্টারে হবে। তাই এত আগেই সেই নির্বাচনের প্রকৃতি নিয়ে কিছু বলার অবকাশ নেই। দু’জন নির্বাচন বিশারদের আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য উদ্ধৃত করছি। তাদের একজন বলেছেন, অতীতের নির্বাচনের যে রেকর্ড তা ভালো নয়, তাই আগামীতে ভালো নির্বাচন হবে এটা বলতে পারছি না। অপরজন বলেছেন, নির্বাচনে দলবিশেষের দৃষ্টিভঙ্গির অলৌকিক কোনো পরিবর্তন না ঘটলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখি না। সংবিধান বলেছে, দেশের মালিক সব জনগণ, সেই মালিকদের নির্বাচনে নির্ভয়ে অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগের সুযোগ যদি ভবিষ্যতে না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের অপমৃত্যুই ঘটবে- এটা বেশি বলা নয়। গত একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যত অনিয়ম হয়েছে, তার সামান্য বলা হয়েছে। সেসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বড় অন্তরায় ছিল। এ কথা স্পষ্ট করে বলা দরকার, ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যদি হতে না পারে এবং সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলকে খুঁজে পাওয়া না যায়; তবে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কোনোভাবেই সফল হবে না।
এটি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত যে গণতন্ত্রের প্রাণ হলো নির্বাচনী ব্যবস্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ও মানসিক সেতুবন্ধ হয়ে থাকে। দেশের শাসক তথা সরকার হিসেবে কে বা কারা তথা কোন রাজনৈতিক দল আসবে সেটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিরও হয়। এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে নির্বাচনের নেচার বা স্বরূপটা কেমন হবে। তা কী স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক হবে? এ দেশের অতীতে সব সময় নির্বাচনকে জনগণ আনন্দ-উৎসব হিসেবে মনে করে এসেছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো বজায় থাকবে কি না এটা একটা প্রশ্ন। নাকি নির্বাচন রাজনৈতিক মাস্তানদের দল জেতানোর মহড়ায় পরিণত হবে। ভোট গ্রহণের দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। অতীতে দেখা গেছে, এসব কর্মকর্তা আগামীতে ফয়দা লাভের জন্য ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের কুর্নিশ করে ভোট গ্রহণের সব ব্যবস্থা তাদের কর্মী-সমর্থকদের হাতে তুলে দেয়। তা ছাড়া ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ সংগঠনগুলোর প্রতি নিতান্ত বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাদের ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে রাতের আঁধারে সব কিছু করে ফেলা হয়। যদি সব কিছু তেমনই হয়, তবে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে যাদেরকেই বিজয়ী বলে ঘোষণা হোক না কেন- সে বিজয় কারো কাছেই কখনই তৃপ্তি মনোতুষ্টির কারণ হবে না। দেশে ও বহির্বিশ্বে সে নির্বাচন নিয়ে নিন্দার ঝড় বইবে। গণতন্ত্রের রেটে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ আরো পিছিয়ে পড়বে। সর্বোপরি দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার এতটাই ক্ষুণœ হবে যে, সে কারণে সবার মধ্যে হতাশা, অনাস্থা আর রাজনীতি গণতন্ত্রের প্রতি চরম অনাস্থা সৃষ্টি হবে যা দেশের জন্য ক্ষতির কারণই হবে। দূর ভবিষ্যতেও এমনটাই ঘটতে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। দূর অতীতে যেসব বিষয় অর্জনের জন্য দেশের মানুষ সংগ্রাম আন্দোলন আত্মাহুতি দিয়েছে তার মধ্যে গণতন্ত্র অন্যতম। সেই ত্যাগ তিতিক্ষা মূল্যহীন হয়ে পড়বে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন। ১১৮ (২) ধারায় রয়েছে, একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহার সভাপতি রূপে কার্য করিবেন। নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মেয়াদ সম্পর্কে সংবিধানে বলা হয়েছে ১১৮(৩) অনুচ্ছেদে; তা হলো ‘সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে’; এবং ১১৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন ও আইনের অধীন হইবেন।’ তার আগে কমিশন গঠন করা সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য যা বলা হয়েছে, যদি সে আলোকে বিধান তৈরি হতো- তবে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হতো এবং সেভাবে কমিশন গঠিত হতো। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে, সে অনুসারে কমিশন গঠিত হয় না। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়েই কমিশন গঠন হয়। ফলে সেই কমিশনের কাছ কাক্সিক্ষত নিরপেক্ষতা আশা করা বাতুলতা মাত্র। সেটা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান কমিশনের কাছ থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের সময় কমিশন প্রধানের পক্ষপাতমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। লক্ষ করা গেছে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা কটাক্ষ করা হলেও তিনি এতটুকু গা করেনি বা আমলে নেননি। সংবিধান কার্যকর হয়েছে প্রায় ৫০ বছর হতে চলেছে। কিন্তু কোনো সরকারই আজ অবধি কমিশন গঠন নিয়ে কোনো বিধিবিধান রচনা করেনি। নতুন নির্বাচন নিকটবর্তী হলে তখন রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ক্ষীণ কণ্ঠে আইন প্রণয়নের কথা বলে। কিন্তু তারপর আর তেমন কিছু বলে না। এখন পর্যন্ত কমিশন গঠনের কোনো বিধান যেহেতু নেই, তাই পূর্বে অনুসৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে তথা একটি সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারের সদস্য হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করা। এটা সহজেই বোধগম্য যে, এ ধরণের তালিকায় সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিরাই অন্তর্ভুক্ত হন। আর একটা কথা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশণের সদস্য হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের যে তালিকা তারা তৈরি করেন, সেখানে কমিশনের সদস্য হওয়ার যোগ্যতাটা কিভাবে এবং কোন ভিত্তিতে ঠিক করা হয়? এটা বিবেচনায় থাকতে হবে কমিশনের সদস্যদের পদগুলো সাংবিধানিক পদ।
এ দিকে সম্প্রতি দেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের বিধানাবলি সাপেক্ষে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও গত ৫০ বছরে কোনো সরকার এমন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাই আইনানুসারে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে। ‘বল’ এখন ক্ষমতাসীনদের কোর্টে, দেখা যাক কি হয়। তবে ইতিবাচক হবে বলে মনে হয় না। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই, যা দৃশ্যত ইতিবাচকই মনে হবে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ‘স্বাধীন থাকিবেন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান কমিশনসহ অতীতের অন্যান্য কমিশনকে দেয়া এই স্বাধীনতার তারা অপপ্রয়োগ করেছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাধর প্রার্থীরা বিধিবিধান লঙ্ঘন করলেও কমিশন মূক ও বধিরের মতো আচরণ করেছেন। তাদেরকে দেয়া স্বাধীনতার কোনো মূল্য তারা দেননি। যাই হোক, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি। ফলে বর্তমান কমিশনের বিদায় নেয়ার পর তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে নতুন কমিশন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নয়া নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে অতীতের মতোই সার্চ কমিটি নয়া কমিশন গঠনের জন্য তালিকা প্রস্তুত করবেন। তা সরকারি দফতর হয়ে রাষ্ট্রপতির অফিসে যাবে। তিনি কমিশনদের নিয়োগ দেবেন। তবে এ ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিরঙ্কুশ নয়। সে জন্য যাচাই-বাছাই যাই হোক না কেন সরকারপ্রধানের পরামর্শ সামনে রেখেই রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দিতে হবে। এমনটা সেই অতীত থেকেই চলে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ইমেজ বহু গুণে বেড়েছে। কোভিডের টিকা দেয়া নিয়ে আমাদের সমপর্যায়ের দেশগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি উৎরে নিয়েছে। কোভিড দেশের বহু মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে, এটা যেমন সত্য, তেমনি সরকার এই নাজুক অবস্থায় গৃহহীন মানুষের মাথা গোঁজার চমৎকার ঠাঁই করে দিয়েছে। বহু ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিল বহু মানুষ ক্ষুধায় নিদারুণ কষ্ট পাবে। তেমনটা হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও একেবারে থেমে যায়নি। প্রশাসনের গতি যে শ্লথ হয়েছিল তা এখন পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। শিল্প কলকারখানা চালু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীর ধীরে খুলছে। মানুষের হাতে কাজ আসছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে যাচ্ছে। সরকারের আরো দু’বছর কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। এসব সরকারের দক্ষতার সাক্ষী। সরকার ডেভেলপমেন্ট ডেমোক্র্যাসিকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ডেমোক্র্যাসি নিয়ে মানুষের সব বেদনা দুঃখ-গ্লানি ধুয়ে মুছে যাবে। শেষ কথা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সে কমিশনের লক্ষ্য যেন একটাই হয়, দেশে স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান।