বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের চরম ভোগান্তি: খুলনা থেকে রাজশাহী ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ!

0

এহতেশামুল হক শাওন, খুলনা॥ খুলনা থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকেট সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর গন্তব্য এখন রাজশাহী। দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের সীমিত সংখ্যক আসন বিপুল চাহিদা মেটাতে অপারগ। ফলে ভর্তি যুদ্ধের আগে টিকেট যুদ্ধে জিততে নাকাল হতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের।
আগামী ৩, ৪ ও ৫ অক্টোবর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ ¯œাতক শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। করোনার কারণে কয়েক দফা শিডিউল পরিবর্তনের পর নতুন তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। ঘোষণা আসার পর থেকে যাতায়াতের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। আগামী ৪ অক্টোবর সি-ইউনিট, ৫ অক্টোবর এ-ইউনিট এবং ৬ অক্টোবর বি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে। নির্ধারিত দিনে রাজশাহীতে পৌঁছাতে ট্রেনের টিকেটের জন্য খুলনা রেল স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকেই। সকাল ৯টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সারারাত কাউন্টারের সামনে শত শত শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকরা অপেক্ষা করেছেন। এরপর বিক্রি শুরুর ঘণ্টাকালের মধ্যেই ফুরিয়ে গেছে সমস্ত টিকেট।
শাহির হোসেনের ভর্তি পরীক্ষা সোমবার (৪ অক্টোবর)। ট্রেনের টিকেট পেতে ব্যর্থ হয়ে একটি রিজার্ভ বাসে টিকেট বুকিং করেছেন। কিন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রেনের টিকেটের। তাই প্রতিদিন স্টেশনে এসে ঘোরাঘুরি করেন, যদি একটা টিকেটের ব্যবস্থা হয় সেই আশায়। বেসরকারি সংস্থায় চাকরিরত শরিফুল ইসলামের মেয়ে বি ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেবেন। মেয়ের সাথে স্ত্রী ও তিনি যাবেন, তাই তিনটি টিকেট অনেক কষ্টে সংগ্রহ করেছেন। গতকাল শনিবার স্টেশনে আসেন ফিরতি টিকেটের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখতে। স্বীকার করলেন, রেল স্টেশন এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তিকে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকেট পেয়েছেন। এখন সেই লোক বলছে, ফিরতি ট্রেনের টিকেট খুলনা থেকে পাওয়া যাবেনা। কিন্ত আগে খুলনা কাউন্টার থেকেই তিনি রিটার্ন টিকেট পেয়েছেন। তাই নিজে চেষ্টা করতে এসেছেন।
যশোরগামী ট্রেনের যাত্রী অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী শেখ আব্দুর রাজ্জাক টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। ঈদ আসলে, পরীক্ষা আসলে, টানা ছুটি আসলে ট্রেনের টিকেট নিয়ে ধুন্ধুমার কারবার শুরু হয়। অনলাইনে টিকিট ছাড়ে, ওপেন হওয়ার আগেই বরাদ্দ বিক্রি শেষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের সামনে পৌঁছালে শোনা যায়, এই মাত্র টিকেট শেষ হয়ে গেল। আমার ছেলে মেয়েরা গত কয় বছর দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। এ যে কতো বড় ভোগান্তি তা একমাত্র অভিভাবকরাই জানে। বিশেষ করে পরীক্ষার্থী যদি মেয়ে হয়, তাদের উদ্বেগ ও হতাশার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই সুযোগে একদল দালাল কালোবাজারির উদ্ভব হয়। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাউন্টার থেকেই টিকেট ম্যানেজ করে বাড়তি দামে বাইরে বিক্রি করে। রেলে চাকরিরত একজন টিটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি বছর পরীক্ষার সময় একই ভোগান্তি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। অথচ সামান্য একটু উদ্যোগ নিলে সমস্ত হয়রানির অবসান সম্ভব। পরীক্ষার এই সময়টাতে দিনে একটা স্পেশাল ট্রেন দেওয়া যায়। সেটা না হলে অন্তত প্রতি ট্রেনে কয়েকটা বগি বাড়িয়ে দেয়া যায়। আন্তঃনগর ট্রেনে সপ্তাহে একদিন ছুটি (বন্ধ) আছে। বিশেষ বিবেচনায় এই ছুটি স্থগিত রাখা যায়। কিন্ত এর কোনটিই করা হয়না। তিনি জানালেন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে শুধু খুলনা থেকেই নয়, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা থেকেও বহু শিক্ষার্থী যাবেন। টিকেটের জন্য এই দুটি স্টেশনেও হাহাকার সৃষ্টি হয়।
খুলনা রেল স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকেট সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, সাধারণ যাত্রী ছাড়াও প্রতিদিন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুপারিশ আসছে। কিন্ত আমাদের কিছুই করার নেই। খুলনা থেকে সকাল সোয়া ৬টায় আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এবং বিকেল ৪ টায় সাগরদাঁড়ি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে পরীক্ষার কারণে কপোতাক্ষ ট্রেনে মাত্র একটা বগি বাড়ানো হয়েছে। একটা বগিতে ১০৫ টি আসন। অথচ কাউন্টারের সামনে শত শত মানুষের ভিড়। কমপক্ষে চারটি বগি বাড়তি যুক্ত হলে কিছুটা হলেও ম্যানেজ করা যেতো। জানা গেছে, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস মঙ্গলবার এবং সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস সোমবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। পরীক্ষা বিবেচনায় এই সপ্তাহে ছুটি স্থগিত রাখার আবেদনে করা হয়েছিল। কিন্ত সে আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এদিকে খুলনা থেকে রাজশাহীতে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু হয়নি। পিরোজপুর-খুলনা-যশোর-রাজশাহী রুটে মেট্রোপলিটন পরিবহনের দুটি বাস নিয়মিত চলাচল করে। পরীক্ষার কারণে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে রিজার্ভ পরিবহনের নামে কয়েকটি বাস ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়মিত বাসে খুলনা থেকে রাজশাহীর ভাড়া ৫০০ টাকা। তবে রিজার্ভ বাসে খামখেয়ালী ভাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।