আন্তর্জাতিক সংবাদ

0

পাকিস্তানে তালেবানের হামলায় এবার সেনা কর্মকর্তা নিহত
লোকসমাজ ডেস্ক॥ পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর আরেকটি হামলায় এবার এক সেনা কর্মকর্তা (ক্যাপ্টেন) নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের অশান্ত উপজাতীয় জেলার পাশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তঙ্ক জেলায় এক গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযান চলাকালে এই হামলা চালায় পাকিস্তান তালেবান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে। বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি সন্ত্রাসী সংগঠনের সমষ্টি টিটিপি আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সরকারের পতন এবং গত ১৫ আগস্ট তালেবানের কাবুল দখলের পর থেকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা জোরদার করেছে। আফগান তালেবানের সঙ্গে এই দলটি কয়েক বছর ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধেও সক্রিয় ছিল।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আইএসপিআর জানিয়েছে, তঙ্কে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির খবর পাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী একটি অভিযান পরিচালনা করে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গুলি বিনিময়ের সময় ক্যাপ্টেন সিকান্দার- যার বয়স ২৭ বছর এবং পাকপত্তান (পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত) ছিলেন, তিনি নিহত হন । ‘জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে’। পৃথকভাবে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে যে, তারা মঙ্গলবার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের প্রত্যন্ত সারওয়াকাই এলাকায় চারজন কমান্ডারসহ ১০ জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তীব্র গুলির বিনিময়ে সন্ত্রাসীরা নিহত হয়েছে। টিটিপি অবশ্য সামরিক বাহিনীর এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী একটি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, যাতে একজন নারী ও দুই শিশু নিহত হয়েছিল। এই দ্বন্দ্বপূর্ণ দাবিগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। পাকিস্তানে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয় টিটিপি। এর সদস্যরাও একই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত ছিল যেখান থেকে আফগান তালেবানদের উৎপত্তি হয়।

আসামে ‘উচ্ছেদ শুধু মুসলমান এলাকায়’
লোকসমাজ ডেস্ক॥ আসামের দারাং জেলার প্রত্যন্ত ধলপুর গ্রামে আসাম সরকার দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে গত কয়েকমাসে। প্রথমদিকে বলা হচ্ছিল একটি প্রাচীন শিবমন্দিরকে অনেক বড় আকারে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মন্দির সংলগ্ন জমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। এধরনেরই একটি উচ্ছেদ অভিযানের সময়ে ২৩ সেপ্টেম্বর আশ্রয়চ্যুতদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালায়।স্থানীয় সাংবাদিকরা পুলিশের গুলিতে অন্তত দুজনের মৃত্যু ও আরও বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর জানান। পরে জানা যায়, সেখানে আসাম সরকার একটি কৃষি খামার গড়ে তোলার জন্য, তাদের ভাষায়, জমি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদের ফলে ভিটে মাটি হারিয়েছেন স্থানীয় বহু বাসিন্দা। সেখানে মানুষ কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন তা দেখতে দিন কয়েক আগে নৌকায় চেপে দু দুটো ছোট খাল পেরিয়ে হাজির হয়েছেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক অমিতাভ ভট্টশালী। বিবিসি প্রতিবেদক বলেন, প্রথমেই চোখে পড়ল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তিনকোণা ঢেউ টিনের সারি। কাছে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম যে এগুলো আসলে কোনও বাড়ির টিনের ছাদ ছিল। যখন উচ্ছেদ অভিযান চলেছে এই গ্রামগুলোতে, যখন ভাঙা পড়েছে বসতবাড়ি, এই ঢেউ টিনের ছাদগুলোকেই মানুষ সরিয়ে নিয়ে এসেছেন। তার তলাতেই কোনমতে মাথা গুঁজে থাকা। কয়েকটা থালা বাসন, একপাশে জড়ো করে রাখা কয়েকটা বালতি, বিছানা-তোষক। টিনের চালগুলোর বাইরে পড়ে আছে ভাঙা, পোড়া আলমারি, টিনের ট্রাঙ্ক। ধলপুরের মানুষের সংসার বলতে আপাতত এইটুকুই। সব কিছুই রাখা রয়েছে ভেজা মাটিতে। আগের রাতে মুষলধারে ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। ‘কাল রাতে খুব ভয় লাগছিল। খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল টিনের চালটা বোধহয় উড়েই যাবে। বাইরেও বেরনোর উপায় নেই। জলের মধ্যেই বাবা মা বোনেদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম সারারাত,’ বিবিসি প্রতিবেদককে বলছিলেন জ্যোৎস্না বানু। ক্লাস নাইনে পড়েন জ্যোৎস্না। জ্যোৎস্নারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে, তার আশপাশে আরও অনেকগুলো টিনের চালের আস্তানা। একটার ভেতরে খাট পেতে মশারি টাঙিয়ে এক সদ্যজাত শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তাদের ওই টিনের চালের নিচে জ্যোৎস্নার মা আনোয়ারা বেগম একটা অ্যালমুনিয়ামের কানা উঁচু থালা থেকে কয়েক মুঠো ভাত চারটে থালায় বেড়ে দিচ্ছিলেন। ‘দ্যাখেন, এই কয় মুঠ ভাত। শুধুই শুকনা ভাত। লবণ, ত্যাল কিসুই নাই। সরকার তো খ্যাদায় দিল, কিন্তু কোনও সাহাইয্য আর করল না,’ বললেন তিনি। ওনাকে আর বিবিসি প্রতিবেদক বলেননি যে, তিনি খাল পেরনোর সময়ে বেশ কয়েক বস্তা চাল আলু, লবণের প্যাকেট এসব আসতে দেখেছেন তাদের গ্রামে। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ পাঠাচ্ছে। গ্রামে একটা মেডিক্যাল বসেছে। কয়েকজন তরুণ ডাক্তার নারী-পুরুষ-শিশুদের কিছু ওষুধ দিচ্ছিলেন। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই শুধু ভাঙা টিন, আলমারি, বাক্স আর বাঁশ পড়ে আছে। যেন একটা ধ্বংসস্তুপ। এর মধ্যেই আবার অনেকে গর্ত করে বাঁশ পুঁতছেন, টিনের চালা বানাচ্ছেন। তার পাশেই একটা বড় সড় জটলা। নানা বয়সের পুরুষ মানুষদের ভিড়। একজনকে কাছে পেয়ে বিবিসি প্রতিবেদক জানতে চাইলেন, কী এমন হয়েছিল যে পুলিশ একেবারে গুলি চালিয়ে দুজনকে মেরে দিল?
তার কথায়, ‘প্রথম দুদিন তো কোনও সমস্যা হয়নি। সরকার বলেছিল আমাদের থাকার জায়গা দেবে, আমরা নিজেরাই সরে এসেছিলাম। সেদিন একটা ধর্নায় বসেছিলাম আমরা। বাইরের কেউ ছিল না কিন্তু। সেখানে ছিলেন জেলার এস পি সাহেবও’। ‘শান্তি মতই আলোচনা হল। তিনি বললেন তোমরা ঘরে চলে যাও। কজনকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও, আমি কথা বলে নেব। সেই মতো সবাই চলেও গিয়েছিলাম। হঠাৎই পূব দিক থেকে গুলির আওয়াজ পাই। সেই দিকে যেয়ে দেখি এক গর্ভবতী মহিলার হাতে গুলি লেগেছে। সেই শুরু,’ বললেন ধলপুরের ওই বাসিন্দা। শুধু যে গুলি চলার দিন সকালে আলোচনা হয়েছিল সরকার আর গ্রামবাসীদের মধ্যে, তা নয়। বেশ কয়েক মাস ধরেই আলোচনা হচ্ছিল এই উচ্ছেদ আর তার পরের পুনর্বাসন নিয়ে। সরকারের দাবি এই জমি তাদের। গ্রামবাসীরা দখলকারী। তাই তাদের সরে যেতে হবে।
‘কেন এটা সরকারি জমি হবে? আমাদের পূর্বপুরুষরা উচিত দাম দিয়ে এই জমি কিনেছিল। সেই দলিলও আমাদের কাছে আছে,’ বলছিলেন আজিরুন্নেসা নামের এক নারী। তাকে বিবিসি প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন, ‘সরকার যে বলছে এক প্রাচীন শিবমন্দিরের জমিও আপনারা দখল করে রেখেছিলেন?’ আজিরুন্নেসা জবাব দিলেন, ‘ওই শিবমন্দির থেকে আমাদের গ্রাম পাঁচ কি ছয় কিলোমিটার দূরে। আমরা ওদিকে যাইও না। আর যদি মন্দিরের জমি খালি করতে হতো, তাহলে আমাদের ঘর ভাঙল কেন সরকার?’ গ্রামে ঘুরে বিবিসি প্রতিবেদক জানতে পারেন যে, ওই মন্দিরের জমি দখল নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, তা মিটে গেছে অন্তত চার মাস আগে। মন্দিরটির জমি যে ১০-১২টি পরিবার বেআইনিভাবে দখল করেছিল, তারা সরে গেছে মন্দির এলাকার বাইরে আর এখন মন্দিরের জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, জানান গ্রামবাসীরা। বোঝাই গেল যে মন্দিরের জমি বেআইনি দখলমুক্ত করার সঙ্গে ধলপুরের উচ্ছেদের কোনও সম্পর্কই নেই। গ্রামের মানুষ আরও বলেন, শুধু যে জমির মালিকানার দলিল তাদের কাছে আছে, তাই নয়। তারা নিয়মিত খাজনাও দিয়ে এসেছেন ২০১৫ সাল পর্যন্ত। তারপরেই এটা সরকারি জমি না ব্যক্তিগত, তা নিয়ে বিতর্ক বাঁধায় আর খাজনা দেন না তারা। তবুও গ্রামবাসীরা সরে যেতে রাজি ছিলেন পুনর্বাসন পেলে। গুয়াহাটির কলামিস্ট বৈকুণ্ঠ গোস্বামী বলছিলেন, ‘ওখানে একটা বড় কৃষি ফার্ম করবে সরকার। ভাল কথা। কিন্তু এতগুলো মানুষকে উচ্ছেদ করছে, এই মানুষগুলো যে কোথায় যাবে, তার কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। আর এই বিষয়টাও ভাবার মতো, শুধু কিন্তু মুসলমান এলাকাগুলোতেই উচ্ছেদ করা হচ্ছে’। প্রথম যে ছাত্রীটির সঙ্গে কথা হয়েছিল, ফেরার সময় দেখা হল তার বাবা মজিদ আলির সঙ্গে। বিবিসি প্রতিবেদককে দেখানোর জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন এনআরসিতে যে তার নাম আছে, সেই কম্পিউটার প্রিন্ট আউট। ‘দেখুন তালিকায় প্রথম নামটাই আমার। আমি বা আমরা গ্রামের কেউ তো এখানকার বাসিন্দা। কেউ বাংলাদেশি নই, কেউই বহিরাগত নই। তবুও সেসবই বলা হচ্ছে আমাদের নামে। আসলে আমাদের দোষ একটাই, এটা আমরা খুব ভাল করে বুঝে গেছি। আমরা মুসলমান। আমাদের দোষ এটাই’।

আরব দুনিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তিউনিসিয়ার নাজলা
লোকসমাজ ডেস্ক॥ আরব বিশ্বে প্রথম কোনো নারী প্রধানমন্ত্রীর পদ পেলেন। কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকা নাজলা বাউদেন রমধান বুধবার তিউনিসিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সইদ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নাজলাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অনেকে তাকে ‘প্রেসিডেন্টের পাপেট’ বলে উলে¬খ করছেন। ৬৩ বছরের এই নারী তিউনিসিয়ায় ন্যাশনাল স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে জিয়োলজির অধ্যাপক ছিলেন। পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান গবেষণা মন্ত্রণালয়ের পরিচালকও ছিলেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও অনেক কাজ করেছেন নাজলা। এর আগে আরব বিশ্ব কোনো নারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি। সেই দিক থেকে নাজলার দায়িত্ব ঐতিহাসিক। কিন্তু কেন তাকে শিক্ষাজগত থেকে রাজনীতিতে তুলে আনা হলো, আদৌ তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশের একাংশের মানুষ প্রেসিডেন্টের এই কাজকে স্বাগত জানালেও অনেকেই বলছেন, নাজলা আসলে পুতুল প্রধানমন্ত্রী, চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করবেন প্রেসিডেন্ট। মাত্র দুই মাস আগে ক্ষমতায় এসেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এসেই পুরোনো প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভেঙে দিয়েছেন মন্ত্রিসভাও। নাজলাকে দ্রুত নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন কাইস সইদ।