আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া বিচার দাবি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দেখতে চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার তাৎক্ষণিক এক টুইট বার্তায় লিখেন- রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের একজন সাহসী চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে শোকাহত ও বিচলিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন পৃথক টুইট বার্তায় লিখেন- আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে আমরা মর্মাহত ও শোকাহত। তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো টুইট বার্তায় লিখেন- মুহিবুল্লাহর প্রতি আমাদের সম্মান, তিনি ছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কণ্ঠস্বর। এরা সেই জনগোষ্ঠী যারা মিয়ানমারে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বর্তমানে অনিশ্চিয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। শরণার্থী শিবির গুলোতে সহিংসতার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরা কেমন হুমকির মধ্যে রয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ড তাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা অফিস প্রচারিত টুইট বার্তায় বলা হয়, রোহিঙ্গা নেতা এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট মুহিবুল্লাহকে হত্যা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা (ইইউ) গভীর শোক প্রকাশ করছি তার পরিবারের প্রতি। একই সঙ্গে আশা করছি ওই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ সরকার) সফল হবেন। বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্নে গেরার্ড ভেন লিউইন টুইট বার্তায় লিখেন- রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় মর্মাহত ও ব্যথিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রাণনাশের হুমকির মুখে ছিলেন মুহিবুল্লাহ: নিজের কর্মের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গাদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার মুহিবুল্লাহ। এমনটাই জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তার হত্যাকাণ্ড বিষয়ক রিপোর্টে মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ (৪৬) অজ্ঞাত অস্ত্রধারীর গুলিতে কক্সবাজারের কতুপালং ক্যাম্পে নিহত হয়েছেন। বর্মী সেনাদের বর্বর অত্যাচারে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গার অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে এডভোকেসি করতেন তিনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাউথ এশিয়ান ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা কমিউনিটির ভাইটাল ভয়েস ছিলেন। তিনি সবসময় তাদের নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পক্ষে ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জীবন এবং ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। তার মৃত্যু শুধু রোহিঙ্গাদের অধিকারকে অবজ্ঞা করবে না, এটা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগেও বিঘ্ন ঘটাবে।
তদন্তের দাবি ফর্টিফাই রাইটসের: বাংলাদেশ সরকারকে শিগগিরই রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ স্মিথ এক বিবৃতিতে বলেন, মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা মিয়ানমার, রোহিঙ্গা এবং সর্বোপরি মানবাধিকার আন্দোলনের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত হামলাকারীরা কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে প্রবেশ করে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে। এতে আরএসপিএইচ চেয়ারম্যান ৪৬ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহ নিহত হন। ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, মুহিবুল্লাহ সত্য, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং তার নিরাপত্তার প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত করে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফর্টিফাই রাইটস হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ২ আরএসপিএইচ সদস্যসহ ৪ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে উল্লেখ করে সংস্থাটির তরফে হত্যাকাণ্ডের সময়কার ছবি ও ভিডিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। ছবিতে মুহিবুল্লাহর বুকের ডান দিকে অন্তত একটি গুলি প্রবেশের ক্ষত দেখা গেছে। আরএসপিএইচ’র একজন সদস্য বলেন, নামাজের পর তাকে গুলি করা হয়েছিল। ওই সদস্য এখন আত্মগোপনে আছেন এবং নিরাপত্তার জন্য তার পরিচয় গোপন রেখেছে ফর্টিফাই রাইটস। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যটি ছিল এমন- তিনি অফিসে অন্যদের সঙ্গে বসে ছিলেন। দুষ্কৃতকারীরা এসে তাকে গুলি করলো। যদি কেউ মুহিবুল্লাহকে গুলি করতে পারে, তাহলে তারা আমাকে আরও সহজে গুলি করে হত্যা করতে পারে। আমি এখন আত্মগোপনে আছি। ম্যাথু স্মিথ বলেন, ঢাকাকে অবশ্যই এই হত্যাকাণ্ডের গভীরে যেতে হবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অবশ্যই মানবাধিকার কর্মীসহ রোহিঙ্গা জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ গত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতা ও অপরাধ নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন।