ঈদ উপলক্ষে দাম ও চাহিদা দুই-ই বেড়েছে চুইঝালের

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ মাংসের স্বাদ বাড়াতে ‘চুঁইঝাল অন্যতম মসল্লা হিসাবে দক্ষিণ-পশ্চিমালের মানুষের কাছে প্রিয়। আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে বেড়েছে চুঁইঝালের চাহিদা। তবে দামও বেড়েছে কিছুটা। কুরবানি যতই ঘনিয়ে আসছে চুঁইঝালের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। যদিও বছরের সবসময়ই চুঁইঝালের চাষ হয় ও হাট-বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু এই সময় তার চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে। জেলায় প্রতি বছর দেড় কোটি টাকার দামের প্রায় ৩০ টন চুঁই ঝাল চাষ হয়।
জানাগেছে, সাধারণ সময়ে চুঁইঝাল কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বিক্রয় হলেও ঈদের কারণে বর্তমানে চুঁইঝালের আকার ভেদে বর্তমানে দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, খুলনা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা এলাকায় জনপ্রিয় একটি ঝাল হলো চুঁইঝাল। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চুঁই লতা জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো, দেখতে সবুজ রংয়ের। চুঁইঝাল খেতে ঝাল হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওষধি গুণ। চুঁইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল- ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় খাসির মাংস, হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। রান্নার জন্যে চুঁইঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। তথ্য মতে, চুঁইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল থাকে।
বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারের চুঁইঝাল বিক্রেতা জনি জানান, চুঁইঝাল সারাবছর মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়। বাগেরহাটসহ খুলনাঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত মশলা চুঁইঝাল। কুরবানির উৎসবের সময় প্রায়ই ঘরে ঘরে মাংস রান্না বৃদ্ধি পায়। মাংসের স্বাদ বাড়াতে মানুষ চুঁইঝাল বেশি কিনে থাকে। যার ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চুঁইঝালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
ঈদ বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারী দরে কিনতেই বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। তাই চুঁইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছি।
আজিজুর রহমান টিটু নামের এক চুঁইঝাল চাষি বলেন, এটি মূলত একটি লতাগুল্ম গাছের শিকড় ও কাণ্ড। একটি গাছ থেকে পরিণত চুঁইঝাল সংগ্রহ করতে হলে গাছটি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। একটি গাছ বড় হতে প্রায় ছয় মাস থেকে বছরখানেক সময় লাগে। সেই জন্য চুঁইঝালের দাম কিছুটা বেশি।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী তালিম হোসেন জানান, সাধারণত দৈনিক ৫ থেকে ১০ কেজি চুঁইঝাল বিক্রি হয়। কিন্ত ঈদের সময় চাহিদা বাড়ায় দৈনিক প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি চুঁইঝাল বিক্রি করেন তারা।
চুঁইঝাল কিনতে আসা তানজীম আহম্মেদ বলেন, চুঁইঝাল ছাড়া গরুর মাংসের স্বাদ পুরোপুরি পাই না । ঈদের সময় চুঁইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। তাই দাম এই সময়ে যদিও একটু বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও কুরবানিতে মাংস খেতে চুঁইঝাল লাগবেই।
শেখ সাদী নামের এক ক্রেতা বলেন, দাম ঈদের আগে আরো বাড়তে পারে। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুঁইঝাল কিনতে এসেছেন তিনি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঈদের সময়ে চুঁইঝালের কদর বেড়ে যায। জেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ করে প্রায় ৩০ টন চুঁইঝাল উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্যে দেড় কোটির টাকার অধিক। ব্যক্তিগত ও বানিজ্যিকভাবে বাগেরহাটে দিন দিন চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে চুইঝালের।