জলবায়ু চ্যালেঞ্জ তরুণদের সম্পৃক্ত করুন

0

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা পৃথিবীতেই বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ ও তীব্রতা বেড়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও অনেক বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মেরু অঞ্চলের বরফ গলার পরিমাণ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ফলে, অনেক দেশেরই উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও উপকূলবর্তী এমন অনেক এলাকা স্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে, যেসব এলাকায় আগে জোয়ারের পানি প্রবেশই করত না। এতে সারা দুনিয়ায়ই বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর পরিমাণ। তারা হয়তো দেশ ত্যাগ করছে না; কিন্তু নিচু এলাকা ছেড়ে ক্রমেই উঁচু এলাকার দিকে চলে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় চার কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে, যার মধ্যে বাংলাদেশেরও থাকছে একটি বড় অংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে সেগুলোর সঠিক মোকাবেলা, লবণাক্ততার কারণে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে লবণসহিষ্ণু চাষাবাদ বাড়ানোর উপায় উদ্ভাবনসহ অনেক বিষয়েই নিরন্তর গবেষণা চলছে। কিন্তু সেসব গবেষণায় কিংবা মোকাবেলা ও খাপ খাওয়ানোর কাজে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে খুবই কম।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি নিয়ে বয়স্কদের মতো তরুণরাও উদ্বিগ্ন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণদেরও মতামত রয়েছে, অর্থবহ চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি মতামত রাখার ক্ষেত্রেও তারা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এসংক্রান্ত গবেষণায় বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্যসহ ২৩টি দেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী আট হাজার তরুণের মতামত, অভিজ্ঞতা, সদিচ্ছা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার চেষ্টা করা হয়। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনটি গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী তরুণরা মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ত করা হলে এমন সব উদ্ভাবনী ধারণা আসবে, যা লক্ষ্য অর্জনকে আরো দ্রুততর ও সুসংহত করবে। আগামী ১ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘কপ ২৬’ সম্মেলন। এতে বিশ্বনেতা ও নীতিনির্ধারকরা অংশ নেবেন। তাঁরা তরুণদের মতামত ও অংশগ্রহণকে আরো গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন এমনটাই মনে করা হচ্ছে ‘গ্লোবাল ইয়ুথ’ লেটার প্রতিবেদনে। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দেড় ফুটেরও বেশি বাড়তে পারে এবং তাতে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপকূলের একটি বড় এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। প্রায় এক কোটি মানুষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তাই জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় তরুণদের আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করা জরুরি হয়ে উঠেছে।