কিশোরদের পরিবার ও সমাজের পরিচর্যা প্রয়োজন

0

সম্প্রতিকালে কিশোর গ্যাং কালচার এখন সারা দেশেই পরিচিতি পেয়েছে। তবে, এই পরিচিতি মোটেও ইতিবাচক নয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে ওঠা দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র এখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি সামাজিক সমস্যা। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের অনেক সদস্যই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি। পত্রিকায় গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশে, বিশেষত রাজধানী ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই রাজধানীর কোনো না কোনো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবের শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। ডিএমপির তালিকা অনুযায়ী আটটি ক্রাইম ডিভিশনে বর্তমানে ১১টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে, যাদের সদস্য অন্তত ২৩০ জন। তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। যশোরে এমন গ্যাং রয়েছে। তাদের হাতে খুনের ঘটনাও ঘটছে।
যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। বাধা দিলে রক্তারক্তি, খুুনাখুনি করে। উত্তরা, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালালেও কিশোর অপরাধ কমছে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় তারা। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে দুর্নীতি, অপরাধ ও অপরাধের নানা উপাদান রয়েছে, কিশোররা তার বাইরে নয়। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে। এলাকায় খেলার মাঠ নেই। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চাও নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তারকাখ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্বতা, অর্থলোভ। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পারিবারিক শিক্ষার অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ করা পুলিশের দায়িত্ব। তবে, তারা বলছে, একার পক্ষে সম্ভব নয়। অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার ও সমাজের সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ কিশোর অপরাধ কমাতে অনেক সাহায্য করবে বলে আমরা মনে করি।