সারাদেশে ১৯ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে, আরও এলাকা প্লাবিত

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ সারা দেশে ১৯টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালও প¬াবিত হয়েছে নতুন নতুন গ্রাম। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল ৯টি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। স্টেশনগুলো হচ্ছে: ফুলছড়ি, সাঘাটা, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, পোড়াবাড়ী, মথুরা ও আরিচা। এ ছাড়া ধরলা নদী কুড়িগ্রামে, ঘাঘট গাইবান্ধায়, ব্রহ্মপুত্র হাতিয়া ও চিলমারীতে, আত্রাই বাঘাবাড়ীতে, ধলেশ্বরী এলাসিনে ও তুরাগ কালিয়াকৈরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদী তিন স্টেশনে গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল সকাল ৯টার তথ্যে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ধরলার পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপত্সীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উলিপুর উপজেলার অনন্তপুর বাজারের কাছে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে নতুন করে পাঁচটি গ্রাম প¬াবিত হয়েছে।
গ্রামগুলো হলো: কাসারিরঘাট, কৌশল্যেরপার, বালারচর, কুমারপাড়া ও দীঘলহাইল্যা। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার তিন শতাধিক চরের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে ২৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন রয়েছে ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টরে। দুর্গত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। চিলমারী ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশাম, খিতাবখা, কিং ছিনাই ও সদর উপজেলার চর বড়াইবাড়ীসহ ২৫টি পয়েণ্টে নদীভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। গৃহহীন হয়েছে আরো শতাধিক পরিবার।
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় এক লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী চলনবিল, ইছামতী, করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়ালের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নদী তীরবর্তী নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বসতবাড়িতে পানি ওঠায় চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্য সংকটে পড়েছে। পানি প্রবেশ করেছে প্রায় ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলায় এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় নদীভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদীপারের মানুষ। এরই মধ্যে নদীভাঙনে অনেক পরিবারের ঘরবাড়ি, বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে জেলার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রে পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ওই উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, মধ্য খাটিয়ামারী, দক্ষিণ খাটিয়ামারী, পশ্চিম খাটিয়ামারী, চন্দনস্বর, উজালডাঙ্গা, গুপ্তমনি, কাওয়াবাধা ও মানিককর গ্রামে গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ বৃষ্টি ও খাদ্য সমস্যার কারণে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার এক হাজার ৫১৫ হেক্টর রোপা আমন এক হাজার ৪৯৫ হেক্টর ও শাক-সবজির ক্ষেত ২০ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে। ফজলুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামাণিক জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটি ওয়ার্ডে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৫ শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ধস নেমেছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জনপদ নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধে। গত মঙ্গলবার থেকে ওই বাঁধের শেষ প্রান্তের নদীতে প্রচণ্ড ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নাটুয়ারপাড়াসহ আশপাশের ১৫ গ্রামের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। গত বুধবার বিকেল থেকে দেখা দেয় ধস। এ পর্যন্ত ওই বাঁধের প্রায় ১০ মিটার ধসে গেছে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বাঁধে নির্মিত একটি মসজিদ। তবে ভাঙন ঠেকাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য পাঁচ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই হাজার জিওব্যাগ ফেলছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মনসুরনগর ও চরগিরিশ ইউনিয়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু রক্ষায়ও জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।