বিদেশে নারী পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

0

দরিদ্র পরিবারের কন্যাসন্তানের দুর্দশার যেন সীমা নেই। বিয়ে হলেও স্বামীর সংসার সুখের হয় না। যৌতুকের দাবি ওঠে। দরিদ্র বাবা যৌতুক দিতে না পারায় মেয়ের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। একসময় ফিরে আসতে হয় মা-বাবার সংসারে। সেখানে আরো ভাই-বোন আছে। কারোরই পেটপুরে খাবার জোটে না। স্বামী পরিত্যক্তা কন্যাসন্তানটি মা বা বাবার সংসারে থাকলেও ভেতরে ভেতরে এক ধরনের অপরাধপ্রবণতায় ভোগে। এ সময় কেউ যদি একটি চাকরির প্রস্তাব দেয়, সেই কন্যাসন্তান বা তার পরিবার বিগলিত হয়ে যায়। বোঝার ক্ষমতা থাকে না সেটি আসলেই চাকরির প্রস্তাব, নাকি কোনো ফাঁদে ফেলার প্রলোভন। এ রকম অনেক চক্র রয়েছে, যারা ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়ে মেয়েদের বিদেশে পাচার করে। যাদের গন্তব্য হয় বিভিন্ন দেশের নিষিদ্ধ পল্লী। এমনই একটি প্রতারকচক্র হচ্ছে কালু-সোহাগ চক্র। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু এই একটি চক্র গত কয়েক বছরে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দুই শতাধিক মেয়েকে ভারতে পাচার করেছে। সম্প্রতি কালু ও সোহাগ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন। কিন্তু আরো কত কালু-সোহাগ চক্র সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে, তার খবর কে রাখে?
কিছুদিন আগে ‘টিকটক বাবু’ ধরা পড়ার পর জানা যায়, এই বাবুচক্রও অনেক মেয়েকে ভারতে পাচার করেছে। ভারতের বেঙ্গালুরুর পুলিশ এই চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। এর আগেও এমন কিছু চক্র ধরা পড়েছে। ভারতে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশের কিছু মেয়েকে বিভিন্ন সময় ফেরতও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার পরও নারী পাচারকারী চক্রগুলো বছরের পর বছর এই ঘৃণ্য অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে কী করে? জানা যায়, শুধু পল্লবী থানাধীন কালশী এলাকার শাহপরান বস্তি থেকেই কয়েক বছরে শতাধিক মেয়েকে ভারতে পাচার করা হয়েছে। এক মা ভারতে গিয়ে বিভিন্নজনের সহায়তায় একটি নিষিদ্ধ এলাকা থেকে তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করে এনেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের অনেক মেয়েকে দেখেও এসেছেন। শাহপরান বস্তির আরেক মা অভিযোগ করেছেন, কালু-সোহাগ চক্র তাঁর মেয়েকেও নিয়ে গেছে। তিনি এ ব্যাপারে পল্লবী থানায় অভিযোগ করেছেন। দিনের পর দিন থানায় ধরনা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, থানায় গেলে পুলিশ নানা ধরনের আজেবাজে প্রশ্ন করে; কিন্তু মেয়েকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
পাচারকারীচক্রের নেটওয়ার্ক দুই দেশেই সক্রিয়। বড় ধরনের অভিযান ছাড়া এদের দমন করা যাবে না। দরিদ্র ও নিরীহ মেয়েদের রক্ষায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে।