অনলাইন বাণিজ্যে প্রতারণা বন্ধ হোক

0

তথ্যপ্রযুক্তি মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছে নতুন নতুন দিগন্তে। নিত্য নতুন প্রযুক্তি উন্মোচিত করছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার। প্রযুক্তির বাহনে চড়ে গোটা বিশ্ব ছুটছে উন্নত থেকে উন্নততর জীবনের দিকে। এই বাস্তবতায় বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমোন্নতির দিকে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবার একটি দুষ্টচক্র নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। অনলাইন জুয়া, গেমস এবং নানা এ্যাপসে প্রতারিত করছে দেশের তরুণ সমাজকে। বিপথে চালানোর অপচেষ্টা করছে নতুন প্রজন্মকে। একই সঙ্গে আরও একটি চক্র ই-কমার্সের মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে প্রতারিত করছে সাধারণ মানুষকে। কিছু মানুষের এমন অপকর্ম খুবই দুঃখজনক এবং ডিজিটালাইজেশনের জন্য ক্ষতিকর।
আধুনিক বিশ্বে ই-কমার্স খুব জনপ্রিয় পদ্ধতি। এতে নগদ অর্থ বহন করতে হয় না, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দোকানে যাওয়ার দিনও শেষ হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতায় বাংলাদেশেও ই-কমার্স দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সুযোগে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। দিচ্ছে লোভনীয় অফার। এসব অফার দেখে পণ্য কিনতে মানুষের হিড়িকও পড়ে যায়। চাহিদার পণ্য না পেয়ে অনেকে দ্বারস্থ হচ্ছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রতারিত হয়ে ১৩ হাজারের বেশি গ্রাহক জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরে অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার নিষ্পত্তি হয়েছে। দেশের অন্যতম আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধেই জমা হয়েছে ৫ হাজারের বেশি অভিযোগ। বেশিরভাগ অভিযোগই টাকা পরিশোধ করে দীর্ঘদিন পণ্য না পাওয়ার। এ ছাড়া ই-অরেঞ্জ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহে হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও জমা পড়েছে অভিযোগ।
ই-কমার্স পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে কোন নীতিমালা ছিল না। এই সুযোগে অনেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেছে, প্রতারিত করেছে মাানুষকে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ই-কমার্সের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নেয়ার পর সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য হস্তান্তর করতে হবে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান মূল্য পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য সরবরাহ করছে না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এমন প্রতারণা সম্পর্কে বলেন, অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ের ২/৩ মাস পরও পণ্য বুঝে না পাওয়া নিয়ে। এর বাইরে ‘চেক ডিজঅনার’ হওয়া, ‘রিফান্ডের’ টাকা ফেরত না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে সমাজ উন্নয়নে বিজ্ঞানের আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে। এক দিকে যেমন তারা মানুষকে প্রতারিত করে অপরাধ করছে, অন্য দিকে প্রযুক্তিকে জনকল্যাণে ব্যবহার না করে মানুষের সমূহ ক্ষতি করছে। আর যাতে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমন অপরাধ করার দুঃসাহস না পায়, সে জন্য অভিযুক্তদের অপরাধের সুষ্ঠু বিচার হওয়া আবশ্যক।