বলুহ মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে পসরা নিয়ে চৌগাছায় আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ আজ পহেলা ভাদ্র, প্রতিবাংলা সনের ভাদ্র মাস এলেই চৌগাছার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামসহ এ জনপদের মানুষের মাঝে বয়ে যেতে থাকে অন্য রকম এক আনন্দ। ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় বলুহ মেলা, সেই মেলাকে ঘিরেই যত না আনন্দ। ইতোমধ্যে দূরের হরেক রকমের ব্যবসায়ীরা পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন চৌগাছায়। তবে এবারও করোনার কারণে মেলা অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
চৌগাছার অন্যতম একটি গ্রাম হচ্ছে হাজরাখানা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটারের পথ। সাপের মত আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে পৌছাতে হয় গ্রামটিতে। চলতি পথে বড় বড় বটবৃক্ষ, কপোতাক্ষ নদের পাড়, সবুজ মাঠ আর বাঁশ বাগানের দেখা মিলবে। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহাকাবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (র.)। ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এই মাজার শরীফকে ঘিরে শুরু হয় মেলা। কোনো ধরনের প্রচার প্রচারণা ছাড়াই হাজারও মানুষের ঢল নামে এখানে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে নানা ধরনের ব্যবসায়ীরা বেশ আগেভাগেই হাজির হয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। সপ্তাহ খানেক ধওে চলা মেলাতে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। কিন্তু গত দুই বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে মেলা বন্ধ থাকায় আনন্দে পড়ে ভাটা। সব কিছু কাটিয়ে এ বছর মেলা হবে এমন আশায় বুক বেধেছে গ্রামবাসীসহ ব্যবসায়ীরা। রবিবার দুপুরে পৌর সদরে একাধিক অচেনা ব্যক্তিকে শিশু খেলনা বিক্রি করতে দেখা যায়, এমনকী কপোতাক্ষ ব্রিজের পাশেও বসে শিশু খেলনা বিক্রি করছে অনেকে। হঠাৎ করেই এ ধরনের ভাসমান ব্যবসায়ীদের আনাগোনা জানান দেয় চলে এসেছে ভাদ্র মাস এমনটিই বলছেন এলাকাবাসী। গ্যাস দিয়ে ফুলিয়ে রাখা হরেক রকমের বেলুন নিয়ে বাজারের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন একাধিক ব্যক্তি। ৫০ থেকে ২শ টাকা দরে বিক্রি করছেন এক একটি বেলুন। এ সময় কথা হয় সুদুর বগুড়া জেলার দুপচেচিয়া উপজেলার জিয়ানগর গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনে ছেলে ব্যবসায়ী শাহাজান আলীর সাথে। তিনি বলেন, মূলত বলুহ মেলাকে কেন্দ্র করে এক মাস আগেই তারা এলাকাতে চলে আসেন। চৌগাছায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা একাধিক ব্যবসায়ী ওই বাসাতেই থাকেন। বর্তমানে উপজেলা সদরে সকাল হতে রাত অবধি চলে বেচাকেনা। মেলা শুরু হলে সেখানে বেচাকেনা শেষে ফিরবেন নিজ জেলাতে।
তার মত বগুড়া, রাজশাহী, নাটোরসহ বেশ কিছু জেলা হতে এ ধরনের ভাসমান ব্যবসায়ীরা এখন চৌগাছায়। সকলেই অধির আগ্রহে চেয়ে আছেন বলুহ মেলার দিকে। যদি এবারও মেলা অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে ভীষণ কষ্ট নিয়ে এলাকায় ফিরতে হবে তাদের এমনটিই জানালেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ঐতিহ্যবাহী বলুহ মেলা উপলক্ষে বেশ আগেভাগেই উপজেলার ব্যবসায়ীরা কাঠের ফার্নিচার বানাতে ব্যস্ত। দুই বছর মেলা বসছে না, এ বছর মেলা হতে পারে সেই ভাবনা থেকে তারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফার্নিচার ব্যবসায়ী আব্দুল গনি বলেন, সরকার ধীরে ধীরে সব কিছুই খুলে দিচ্ছে। সেকারণে মনে হচ্ছে এ বছর মেলা বসবে, তাই কিছু ফার্নিচার তৈরি করছি, দেখা যাক শেষমেষ কি হয়। হাজারাখানা গ্রামের বাসিন্দা সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলুহ মেলা। বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত দুই বছর মেলা বন্ধ আছে। পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয় সেক্ষেত্রে মেলা বসানোর ব্যাপারে কাজ করা হবে।