‘শিশু রাসেল শাহাদতবরণ করেছিল কি-না খুনি মোশতাক বারবার নিশ্চিত হন’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই রাতে শিশু রাসেল শাহাদতবরণ করেছিল কি-না খুনি মোশতাক (খন্দকার মোশতাক আহমদ) বারবার নিশ্চিত হয়েছিলেন। মোশতাকের মনে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে প্রবাহিত হবে সেই বাংলাদেশকে পাল্টে দিতে পারবে। রোববার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান। তেজগাঁও আওয়ামী লীগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুনিরা শিশুপুত্র রাসেলকেও ছেড়ে দেননি কেন? এটা যদি আপনারা বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখতে পাবেন- খুনিদের একটি স্পষ্ট ধারণা ছিল ও তারা বিশ্বাস করেছিল যে, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যদি বেঁচে থাকে তাহলে বঙ্গবন্ধুর কথা বলবেই এবং পুরো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবেই। তাদের ভয়টা অনুমান ছিল, আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গোটা পরিবার হারানোর পরেও বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে প্রবাহিত হচ্ছে তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি সারাবিশ্বের নন্দিত নেতা। তাকে কখনো বলা হয় মাদার অব হিউম্যানিটি, কখনোবা বলা হয় স্টার অফ দ্য ইস্ট। বিশ্বের মানুষ উচ্চ আসনে প্রধানমন্ত্রীকে ধারণ করে। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কীভাবে আসতো তা একমাত্র খোদা জানেন। তার জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ দেয়ার জন্য। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ হবে এটি তার স্বপ্ন ছিল। তার জন্ম হয়েছিল এ দেশের খেটে খাওয়া গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার জন্ম হয়েছিল এ দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হবে এটি তার চেতনা ছিল। তাকে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করতে হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনি বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন। তাদের ফেরত আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি হয়েছে। সেই কমিটি খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। পাশাপাশি বলতে চাই, এই খুনিরা আগস্ট মাসকে ঘিরে টার্গেট করে আসছিল। আপনারা দেখেছেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে কীভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা হয়েছে। তারা যে এখনো আছে সেই জানান দিয়েছিলেন। এর সবগুলোই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছি। সবগুলোকেই আজ কন্ট্রোল করতে সক্ষম হয়েছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে যাওয়ার আগে বঙ্গমাতা তাকে বলে দিয়েছিলেন, তুমি যা হৃদয়ে ধারণ করে চলেছ এতদিন, ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে যা তুমি অর্জন করতে চেয়েছ, তোমার হৃদয় থেকে যেটি আজকে আসে সেটিই তুমি আজকে বক্তব্যে বলবে, দেশের জনগণকে জানাবে। তিনি তাই করলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা। তিনি কাছে রেখে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দিতেন ও সাহস জোগাতেন। ‘আমরা কাছ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। বঙ্গবন্ধু এলেন। দু-একজনের বক্তব্যের পরই বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শুরু করলেন। তাকে অনেকে অনেক কাগজ দিলেন। অনেকেই কানে কানে অনেক কথা বললেন। কারও কথা না শুনে বঙ্গবন্ধু কাগজগুলো রেখে দিলেন। তার হৃদয়ের কথাগুলো- যেগুলো তিনি বিশ্বাস করতেন, সেগুলোই তিনি একের পর এক বলে গেলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ ‘বঙ্গবন্ধু না থাকলেও দেশ কীভাবে চালাতে হবে তাও তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে বলে গিয়েছিলেন। তার বক্তব্যের প্রত্যেকটি শব্দ, প্রত্যেকটি সেনটেন্স ছিল মিনিংফুল।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বে একটি অন্যতম ভাষণ হিসেবে আজ স্বীকৃত। তিনি যদি কাগজের লেখাগুলো বলতেন, হয়তো আমরা এই ভাষণটি বা তার হৃদয়ের কথাগুলো জানতাম না। আজ আমরা যখন কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ি তখনই স্মরণ হয় বঙ্গমাতার কথা। বঙ্গবন্ধু যখনই জেলে যেতেন বঙ্গমাতা তখনই একটি নোটবই ও কলম দিতেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত করেছিলেন। তিনি অনেক আগে থেকেই বলতে পারতেন আমরা তোমাদের সঙ্গে থাকব না, আমরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাব। তার বিচক্ষণতায় ধাপে ধাপে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তিনি স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এজন্য আমরা মাত্র নয় মাসেই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। করোনাকালে সারাবিশ্ব যখন স্তব্ধ, তখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় অনুরোধ করছেন, কেউ মাস্ক খুলবেন না।তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তেজগাঁও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান।তেজগাঁও থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য রাখেন।