দূর করতে হবে মহাসড়কের সব প্রতিবন্ধকতা

0

সারাদেশে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তার বিশাল অংশ ভেঙ্গে খানাখন্দে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। করোনা অতিমারির কারণে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সারাদেশে লকডাউন থাকায় মহাসড়কগুলোতে আন্তজেলা বাস চলাচল করেনি। সাধারনত দেখা যায়, রাস্তা সংস্কার, ফ্লাইওভার নির্মানের কারণে ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রি চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। অথচ লকডাউনের সময় ভাঙ্গাচোরা সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামত ও সংস্কার করা হলে তা জনদুর্ভোগ অনেকটা কমিয়ে আনতে পারত। ঈদের পর ১৯ দিনের টানা লকডাউন শেষে গতকাল থেকে সারাদেশে সড়কপথে আবারো গণপরিবহণ চলাচল শুরু হলেও রাস্তার বেহাল দশার কারণে জনদুর্ভোগের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। গতকাল ইনকিলাবে দেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে বা লাইফলাইন বলে খ্যাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের বেহালদশার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নানা প্রতিকুলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার বেড়া ডিঙিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হলেও প্রত্যাশা অনুসারে এ রাস্তার যানজট ও জনদুর্ভোগ তেমন কমেনি। রাস্তার অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, দখলবাজি ও যত্রতত্র ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় যানচলাচলের স্বাভাবিক গতি- স্বাচ্ছন্দ্য ব্যহত হওয়ার কারণে সড়কে লেন বাড়িয়েও তেমন লাভ হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এখনো প্রায়শ ১০-২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। করোনা মহামারি এখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রতিদিনই বাড়ছে বিপজ্জনক ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা। এরপরও দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা করে গণপরিবহণসহ সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ড উন্মুক্ত করেছে সরকার। দীর্ঘ বিরতির পর সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরুর কারণে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। করোনার কারণে রফতানি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হলে সড়ক মহাসড়কগুলোতে যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দগুলো করোনা লকডাউনের মধ্যেই মেরামত করে ফেলার যে সুযোগ ছিল তা কাজে লাগানো হয়নি। এখন পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও গণপরিবহন শুরু হয়ে যাওয়ার পর জনদুর্ভোগ কমাতে জরুরি রাস্তা সংস্কারের নামে জনদুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তোলা হবে। বর্ষার সময় রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারের নামে বিপুল অর্থের অপচয় এবং জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার নজির দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে। সময়মত কাজ শুরু ও শেষ করার উদ্যোগ না নিয়ে বর্ষার সময় ও অর্থবছরের শেষ দিতে তড়িঘড়ি করে যেনতেন প্রকারে কাজ শেষ করার কিছুদিনের মধ্যেই তা পুনরায় খানাখন্দে পরিনত হয়। জনগণের ট্যাক্সের এমন শত শত কোটি টাকার অপচয়-লোপাটের কোনো জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে।
রাস্তার ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দের কারণে গত ঈদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রায় ৩ সপ্তাহের লকডাউনে এসব রাস্তা মেরামতের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে এখন জনদুর্ভোগ এতটা প্রকট হতো না। সরকার তথা সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর তরফ থেকে লকডাউনে রাস্তা মেরামতের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা’ বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রমজানের ঈদের সময় শুরু হওয়া বেশকিছু রাস্তা মেরামতের কাজ যেনতেন ভাবে শেষ করায় তা আবারো বেহালদশায় পরিনত হয়েছে। সে সব ভাঙ্গা রাস্তা লকডাউনের সময়ও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ভাঙ্গাচোরা। এরমধ্যে জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ৪৮৭ কিলোমিটার ভাঙ্গা, এর মধ্যে ১৩২ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই শোচনীয় বলে জানা যায়। মহাসড়কগুলো দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ অবকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাজার কিলোমিটার রাস্তায় দু’চার কিলোমিটার ভাঙ্গাচোরা, কোনো কোনো স্থানে অবৈধ পার্কিং, অস্থায়ী হাট-বাজার থাকার কারণে পুরো মহাসড়কের গতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে। ভাঙ্গা ছাড়াও মহাসড়কে স্থানীয়দের দখলবাজি, অবৈধ পার্কিংয়ের কারণেও দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। এসব দখলবাজি, অবৈধ পার্কিং নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা দেখা যায় না। মানুষের স্বাচ্ছন্দ যাতায়াত, কৃষিপণ্যের বিপণন, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও রফতানি পণ্য পরিবহণে মহাসড়কগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে থাকে। নানা কারণে রাস্তায় যানজট ও জনদুর্ভোগ দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে ব্যহত করে। সড়ক-মহাসড়ক নির্মান, মেরামত ও উন্নয়নে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।