রাত থেকে কেন্দ্রে লাইন, বাড়ছে ঘাটতি

0

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ॥ রাতেই এসে লাইনে অপেক্ষা করছেন শত শত লোক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ টিকাপ্রত্যাশীদের। দিন যতই যাচ্ছে প্রথম ডোজের গতি কমায় টিকার অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হচ্ছে। অনেকে নিবন্ধন করে এক মাস পরেও টিকার খুদেবার্তা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে দেশে করোনা প্রতিরোধে চলমান গণটিকাদান ক্যাম্পেইন আজ শেষ হচ্ছে। প্রতিদিনই টিকার নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ লাখ করে বাড়ছে।
বেহায়াপনার অন্য রূপ
টিকার জন্য নিবন্ধনকারীদের এই মুহূর্তে প্রায় ৩ কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন। অথচ টিকা হাতে আছে প্রায় ৭৭ লাখ ডোজ। বিভিন্ন হিসাব করে দেখা যায়, দেশে আড়াই কোটির বেশি টিকার ঘাটতি রয়েছে। এই মাসের মধ্যে টিকার বড় কোনো চালান দেশে না আসলে সমস্যায় পড়বেন টিকাপ্রত্যাশী নিবন্ধনকারীরা। সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকেও। পুরান ঢাকার একটি কেন্দ্রে কেউ কেউ এসেই করোনার টিকা নিতে পারছেন। আবার অনেকে ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে রোকন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, স্বেচ্ছাসেবীরা পরিবারের সদস্যদের টিকা দিতে চাইলে তিনি বাধা দিতে পারেন না। এই ঘটনা ঘটছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটখোলার মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টার টিকাকেন্দ্রে। গতকাল সকাল সাতটায় শতাধিক নারী-পুরুষ লাইন ধরে টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। লাইনের অনেকে বলেন, এর আগেও টিকার জন্য এসেছিলেন, কিন্তু না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। গতকাল টিকা নেয়ার জন্য রাজধানীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে রাতে বা ভোরে মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। তাদের কেউ কেউ টিকা দিতে পারেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১০ই আগস্ট পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭৩ জন। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোজ টিকার দরকার ৯৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৪ জনের। আর নিবন্ধনকারীদের মধ্যে এক ডোজও টিকা পান এমন সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ৭২ জন। অর্থাৎ প্রত্যেকের ২ ডোজ করে ২ কোটি ৭০ লাখের কিছু বেশি টিকা লাগবে। বর্তমানে নিবন্ধনকারীদেরই সবমিলিয়ে টিকা দরকার ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬১৮ ডোজ। কিন্তু টিকা হাতে মজুত আছে মাত্র ৭৬ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ ডোজ। হিসাব করে দেখা যায়, ২ কোটি ৯২ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৮ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে। ১০ই আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ২ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার ৫১৯ জন। অন্যদিকে দেশে কেনা ও উপহার মিলে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ।
মডার্নার প্রথম ডোজ বন্ধ আজ থেকে: চলমান টিকা কর্মসূচিতে মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা প্রয়োগ বন্ধ হচ্ছে আজ ১২ই আগস্ট থেকে। একইসঙ্গে এই দিন থেকেই মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১২ই আগস্টের পর সারা দেশে মডার্না ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ দেয়া বন্ধ ও ২য় ডোজ দেয়া আরম্ভ হবে। তবে যেসব স্থানে উক্ত ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ উদ্বৃত্ত রয়েছে সেসব স্থানে দ্রুত ১ম ডোজ দেয়ার কাজ সম্পন্ন করে ২য় ডোজ দেয়া শুরু করতে হবে। এ ছাড়াও ১৪ই আগস্ট থেকে সারা দেশে আবশ্যিকভাবে সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের ২য় ডোজ দেয়া আরম্ভ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সারা দেশের টিকা কেন্দ্রগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন শিগগিরই পাঠানো হবে। সারা দেশে ৭ই আগস্ট শুরু হওয়া গণটিকাদান ক্যাম্পেইন আজই শেষ হচ্ছে। ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট নিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তা দুইদিনে অতিক্রম করেছে। সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ও বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ৭ই আগস্ট থেকে ১২ই আগস্ট পর্যন্ত চলে এই ক্যাম্পেইন। ১৮ বছর বয়সী অনেকের এনআইডি না থাকায় বয়সসীমা ২৫ বছরের উপরে নাগরিকরাই টিকা ক্যাম্পেইনে টিকা নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, দেশে করোনার টিকাদান উদ্বোধন হয় চলতি বছরের ২৭শে জানুয়ারি আর গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। আর গ্রামের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয় ৭ই আগস্ট থেকে।