করোনায় ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন জনের মৃত্যু যশোরে ৭ আগস্ট থেকে ৯৩ ইউনিয়নে যেভাবে টিকা দেওয়া হবে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে আগামী ৭ আগস্ট থেকে যশোরে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে করোনা টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার ৮ উপজেলার মোট ৯৩ টি ইউনিয়নের সাবেক একটি ওয়ার্ডে এ টিকা প্রদান করা হবে বলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন এসব কেন্দ্রে টিকা প্রদানের পরিকল্পনাও রয়েছে। টিকা প্রদান চলাকালে এক ওয়ার্ডের বাসিন্দা অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে টিকা গ্রহন করতে পারবেন না বলেও জানাগেছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসার ডা. সেখ আবু শাহীন বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্কদের করোনা টিকার আওতায় আনার জন্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে টিকা কার্যক্রমের অনেক নিয়ম শিথিল করে ৭ আগস্ট থেকে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৭ আগস্ট থেকে আমরা যশোর জেলার ৮ উপজেলার ৯৩ টি ইউনিয়নের এ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা প্রত্যেক ইউনিয়নের সাবেক একটি ওয়ার্ডকে টিকা কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেবো। ওই ওয়ার্ডে ইউনিয়ন পরিষদ বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানে এ কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ টি বুথে টিকা পাওয়ার উপযুক্ত নারী-পুরুষরা টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের বাইরের কেউই এখান থেকে টিকা নিতে পারবেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান প্রত্যেক ইউনিয়ন ৯ টি ওয়ার্ডে ভাগ রয়েছে। কিন্তু টিকা নেওয়া হবে পুরনো আগের ওয়ার্ড এলাকা হিসেবে। প্রথম পর্যায়ে একটি ইউনিয়নের পুরনো একটি ওয়ার্ডে টিকা কেন্দ্র থাকবে। প্রতিদিন ওই কেন্দ্র থেকে সপ্তাহে তিনদিন টিকা প্রদান করা হবে। তিনদিনে ওই ওয়ার্ড থেকে ১৮০০ মানুষকে টিকা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, একটি ওয়ার্ডের টিকা কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরের আরেকটি ওয়ার্ড থেকে একই নিয়মে টিকাদান কর্মসুচি শুরু করা হবে। টিকাদান কর্মসুচিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যবিভাগের লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা সহযোগিতা করবেন। এভাবেই ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনা হবে বলে সিভিল সার্জন বলেন।
এদিকে সোমবার ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও চারজন। পরীক্ষা বিবেচনায় গতকাল করোনা শনাক্তের হার ১৯ শতাংশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের রেড জোনে ভর্তি ছিলেন তিনজন। আর উপসর্গ নিয়ে ইয়েলো জোনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন একজন। করোনায় মৃতদের মধ্যে দুইজন নারী ও এক পুরুষ; যাদের বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এরা সবাই যশোরের বাসিন্দা।
সোমবার সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী বেগম বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে আজ ভর্তি রয়েছেন ৯৬ জন। ইয়েলো জোনে আছেন ২৮ জন।
এদিকে, গতকাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আজ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় এর মধ্যে ৮৩ জনের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস রয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ শতাংশ।
হাসপাতালের তত্তাবধায়ক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদানে আমরা সব সময় সচেতন রয়েছি। তিনি বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে শহরের পাশাপাশি গ্রাম এলাকা থেকে মানুষ হাসপাতালে আসছেন।
এদিকে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন যশোরে অনেকটা ঢিলেঢালা অবস্থায় চলছে। সংক্রমণ রোধে মানুষকে বিনা কারণে বাইরে না আসার কথা বলা হলেও প্রতিনিয়ত সড়কে মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ স্থানীয় যানবাহনে মানুষের চলাচল বেড়েই চলেছে। লকডাউন শুরুর দিক থেকে প্রশাসন যেমনটা কঠোর অবস্থানে ছিলো বর্তমান তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
শুধুমাত্র শহর ও আশপাশের পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে প্রশাসনের যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। শহর ও শহরতলীর সবজি ও মাছ বাজারগুলোতেও মানুষের স্বাস্থ্যবিধি ভেঙ্গে চলাচলের প্রবণতাও আগের চেয়ে বেশি ছিলো।
জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনা থেকে জীবন বাঁচাতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে এ বিষয়ে সচেতন হলেই এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। তিনি সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। যেখানে অসঙ্গতি বা আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নিচ্ছে।