আবারও একটি ঈদ কড়া নাড়ছে দরোজায় চৌগাছায় ২০টি কিন্ডার গার্টেনের ২ শতাধিক শিক্ষক কর্মচারী করোনায় হয়েছেন অসহায়

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় মহামারি করোনা ভাইরাসের এই সময়ে চরম কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন কিন্ডার গার্টেনের ২ শতাধিক শিক্ষক কর্মচারী। প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ, নেই কোনো বেতন ভাতা, পারছেন না অন্য কোনো পেশায় যেতে, দিন কাটছে অতি কষ্টে। অসহায় এই পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।
চৌগাছা উপজেলায় অন্তত ২০ টি কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে গড়ে ১০ জন করে শিক্ষক কর্মচারী চাকরি করেন। বিদ্যালয়গুলোতে দিনের বেশির ভাগ সময়ে শিক্ষার্থী অভিভাবক আর শিক্ষক কর্মচারীদের উপস্থিতিতে অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হত। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ, তাই শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন নেয়াও রয়েছে বন্ধ, ফলে মাসের পর মাস কোনো শিক্ষক কর্মচারীকে বেতন দিতে পারছেনা স্কুল কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক বিদ্যালয় ভাড়া করা জায়গায় ভবন নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠান চালাতেন। করোনার কারনে ভাড়া বাকি থাকায় জমি মালিক সেখানে আর স্কুল চালাতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
চৌগাছার সবুজ কুঁড়ি আইডিয়াল স্কুল, বেল প্রি ক্যাডেট স্কুল, প্রতিভা এডাস স্কুল, চাইল্ড কেয়ার এডাস স্কুলসহ বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় দেড় বছর কোনো বেতন পাইনা, কত কষ্টে যে দিন পার করছি শুধু বিধাতাই জানেন। করোনা মহামারির মধ্যে ৩টি ঈদ গেছে, বা””াদের নতুন পোষাক তো দূরের কথা, তাদের মুখে ভাল খাবার তুলে দিতে পারেনি। পিতা হয়ে এর চেয়ে আর কষ্টের কি হতে পারে। সামনে কোরবানির ঈদ, কীভাবে দিনটি পার করবো ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রথম দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু টাকা দিতেন, কিন্তু বিদ্যালয়ে কোনো আয় না থাকায় তারাও আর কত সহযাগিতা করবেন। আমরা যে শিক্ষিত, আমরাও যে শিক্ষক এই কথাটি ভাবতেও আজ কষ্টে বুক ফেটে যায়।
প্রতিভা এডাস স্কুলের গাড়ি চালক শাহাজান আলী বলেন, করোনার প্রথম দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেশ সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এখন তার কাছে হাত পাততে আমার বিবেকে বাধে। স্কুল বন্ধ গাড়ি চলছে না, মাঠেও কাজ করতে পারিনা বেশ কষ্টে পার হচ্ছে দিনগুলো।
নবকিশালয় কিন্ডার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, মহামারি করোনার কারণে কিন্ডার স্কুলগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। মাসের পর মাস শিক্ষক কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন, প্রতিষ্ঠান মালিককে স্কুল বন্ধ থাকলেও ঘর ভাড়া গুনতে হচ্ছে, ভাড়া দিতে না পারায় ভবন ছেড়ে দিতে হয়েছে এমনও নজির আছে। মানসম্মত শিক্ষাদানে কিন্ডার স্কুল যে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছিলো সেদিকটা বিবেচনা করে এই সব স্কুলের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাসের পর মাস বেতন না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে চলা অবশ্যই কষ্টের। কিন্ডার স্কুালের এই সব শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি ভাবে আমার জানা মতে আজও কোনো অনুদান আসেনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এনামুল হক জানান, উপজেলা কিন্ডার গার্ন্টেন স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য কোন অনুদান আমরা আজও পাইনি। কখনও যদি পাই তাহলে অবশ্যই শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।