যশোরে দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে করোনা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে মরণব্যাধি করোনাভাইরাস। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলছে করোনার ভয়াবহ থাবা। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন করোনা রোগীর চাপ বাড়ায় রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা শনাক্ত হওয়া ও এই রোগের উপসর্গ নিয়ে মোট মারা গেছেন ১২ জন। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৬ জন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে এখন মোট ভর্তি রয়েছেন ১৩৬ জন এবং ইয়েলো জোনে ৯৯ জন।
চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনরা জানান, অনুমোদিত শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহ হচ্ছে। অনেক সময় ডাক্তার -নার্স পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মতে রোগীদের সঠিক চিকিৎসায় আরও বেশি চিকিৎসক-নার্স ওই ওয়ার্ডে দিলে রোগীরা সত্যিকারে উপকৃত হবে।
এদিকে, গতকাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে করোনার টেস্টে ১৭৪ জনের নমুনাতে কোভিড-১৯ পজেটিভ পাওয়া গেছে। যশোরের ৪৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ফলাফল পাওয়া যায়। গতকাল শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ৩৩।
গেল ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে একাত্তর টিভির যশোর প্রতিনিধি এসএম ফরহাদের বাবা মিছির আলীও রয়েছেন। সোমবার দিনগত মধ্যরাতে জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে তিনি মারা যান।
একই দিনে যশোরের শার্শা উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জমজ ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে।
তাদের বড় ভাই বাগআঁচড়া ডা. আফিল উদ্দিন কলেজের শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, তার এই ভাইবোন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
তাদের বয়স ৪৫ বছর, বাড়ি শার্শা উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামে।
শিক্ষক আতিয়ার বলেন, তার ভাই বোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইয়ের কিডনি ও হার্টেও সমস্যা দেখা দেয়। তাদেরকে ২৩ জুন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটা বেশি। এ জন্য গ্রামের মানুষ যাতে সংক্রমণের বিষয়ে গুরুত্ব দেয় সে বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, সংক্রমণ রোধে জেলাব্যাপী চলমান কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। যেখানে অসঙ্গতি দেখছে সেখানেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সবাইকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংক্রমণের উপসর্গকে গুরুত্ব দিয়ে করোনা টেস্ট করতে হবে।