লাগাতার লকডাউনে থেমে গেছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকার চাকা : মিলছে না সরকার সহায়তা

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে লাগাতার লকডাউনে থেমে গেছে রিক্সা চালক আহম্মদ আলীর জীবন-জীবিকার চাকা। পুলিশের সাথে লুকোচুরি করে যে টুকু আয় করছে, তা দিয়ে চলছে না সংসার অর্ধাহারে অনাহারে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আহম্মদ আলী। থাকেন যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে। রিক্সার প্যাডেল না ঘুরলে তার পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার ওঠে না। শহরের সিভিল কোর্ট মোড়ে লকডাউনের মধ্যে কিভাবে চলছে জানতে চাইলে আহম্মদ আলী তার কষ্টের কথা জানান। দীর্ঘ আলাপচারিতায় এই রিক্সাচালক বলেন, নিত্যদিনের আয় উপার্জনে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে তার সংসার চলে। নেই ন্যূনতম কোন সঞ্চয়। লকডাউনের কঠোর বিধি নিষেধে তার আয় উপার্জন অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে দিনে ৫ থেকে ৬শ টাকা আয় হতো, সেখানে সারাদিন রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রিক্সা চালিয়ে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা আয় হচ্ছে। যা চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে গিয়েই শেষ। এর মধ্যে বৃদ্ধ মায়ের নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে প্রশাসনের কঠোর নজরদাবিতে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানের মুখে ভালোভাবে খাবার তুলে দিতে পারছি না। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটলেও পাচ্ছি না কোন সরকারি কিংবা সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য সহযোগিতা। আহম্মদ আলীর মত যশোর শহরে হাজার হাজার রিক্সা ও ইজিবাইক চালক আছেন। একইভাবে চলে তাদের জীবন সংগ্রাম। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন রাস্তায় প্যাডেল ঘুরিয়ে তারা সচল রাখতো দৈনন্দিন জীবনের চাকা। স্বজনদের মুখে হাসি ফোঁটাতে চলতো তাদের প্রতিদিনের প্রাণান্তর চেষ্টা। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনের কারণে রুদ্ধ হয়ে গেছে তাদের আয় উপার্জনের পথ। শিকেয় উঠেছে হাঁড়ি। স্বজনদের হাসি মুখের পরিবর্তে দেখতে হচ্ছে মলিন মুখে। প্রাণঘাতি করোনায় যেখানে সবাই চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে, অনেক ধনী এসে দাঁড়িয়েছেন দরিদ্রের কাতারে। সেখানে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের জীবন কীভাবে চলতে পারে সেটি সহজে অনুমান করা যায়। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো রিক্সাচালক রেজাউল ইসলাম ও হযরত আলী বলেন, শহরে স্বাধীনভাবে রিক্সা চালাতে পারছি না। আয় উপার্জন প্রায় বন্ধ। কেউ খেতে দিচ্ছে না। পাচ্ছি না কোন সাহায্য-সহযোগিতা। এখন কিভাবে চলবো? কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য সহায়তার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, আমরা কোন ত্রাণ সমাবেশ করতে চাই না। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হাতে তাদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। কেউ না পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। চোখে মুখে হতাশার ছাপ পড়ে যাওয়া এসব শ্রমজীবী মানুষের একটাই প্রত্যাশা অচিরে ফিরে আসুক করোনা পূর্বের সেই মুক্ত দিন। সে দিনের শুরুতে রিক্সা নিয়ে আবার রাস্তায় নেমে পড়বেন একটু ভালো রোজগারের আশায়। স্বজনদের মুখে আবারও ফুটিয়ে তুলবেন হাসি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এই দুর্দিনে শ্রমজীবী মানুষের এমন প্রার্থনা।